সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের যন্ত্র আনার কথা বলে রোগীকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষ টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডা: রাজিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। চাহিদা অনুযায়ী কিছু টাকা বাকী থাকায় ক্ষেপেছেন ডাক্তার।
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করায় সত্তোরর্ধ্ব লালমতি বেগম কে হাসপাতাল থেকে কৌশলে বিদায় করলেন কর্তৃপক্ষ।রোগীর পেটে টিউমারের অস্ত্রপাচারের জন্য গত ২২ জুন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালটির নতুন ভবনের পঞ্চম তলায় মহিলা সার্জারী বিভাগে ভর্তি করা হয় মাগুরা জেলা সদরের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ওহাব আলীর সত্তোরর্ধ্ব মা লালমতি বেগমকে।
এরপর ৩০ জুন ওই বৃদ্ধাকে পেটে অস্ত্রপাচার করার দিন ধায্য করা হয়। ঢাকা থেকে অপারেশনের জন্য একটি যন্ত্র আনতে হবে বলে আগের দিন রাতে রোগীর ছেলে ওহাব আলীকে কল করে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম। মৃত্যু শয্যায় মায়ের অপরাশনের সময় ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেন ছেলে ওহাব আলী। বাকী টাকা না পেয়ে অপারশন শেষ না হতেই বাধে দন্দ।
রোগীর ছেলে ওহাব আলী অভিযোগ করে জানান, গত ২২ জুন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির ভর্তি করি। ৩০ তারিখে আমার মায়ের অপারেশনের দিন ধায্য করে ডাক্তার। আগের দিন শনিবার রাতে আমার বোনের মোবাইল দিয়ে ডাক্তার রাজিব স্যার কল দিয়ে বলে ঢাকা থেকে মেশিন আনতে হবে। ৫০ হাজার টাকা লাগবে।
অপারেশনের আগে ৩০ হাজার দিবা আর অপারেশন শেষে বাকী টাকা পরিশোধ করতে হবে। আমি আমার স্ত্রী ও বোন ভাগ্নে নিয়ে অপারেশনের দিন সকালে হাসপাতালে চলে আসি। ২৮ হাজার টাকা দেয়। রাজিব স্যারের নের্তৃত্বে আমার মায়ের অপারেশন করে তার লোকজন। অপারেশনের মধ্যে রাজিব স্যার এসে দেখায় এই যন্ত্রটা আনা হয়েছে দ্রুত টাকা দে বলে বকাবাজি করে। আমি তাকে বলি স্যার এটা সরকারি হাসপাতাল অপারেশনে টাকা লাগে না, তারপরও আপনে টাকা নিবেন! আমি টাকা দিব কিন্তু একটু ভাল ব্যবহার করেন।
ধমক দিয়ে টাকা চাচ্ছেন কেন? আপনে একজন শিক্ষিত লোক হয়ে এটা কেমন ব্যবহার ? আপনারা কাজ করেন আমি দিব। এসময় অনেক চিল্লাচিল্লি হয়, লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পরে আনসার ডেকে আমাকে মারধরের ভয়ভীতি দেয়ায়। এরপর অপারেশনের পরে আমি মাগুরা চলে যায়। কিন্তু তার পরদিন থেকেই আমার মায়ের কাছে বোন থাকে। তাকে প্রতিদিন ডাক্তার রাজিব ও তার লোকজন এসে বলে তোর ভাই–ভাবিকে হাজির কর। নইলে পুলিশ দিয়ে ধরে আনবো কিন্তু। নইলে তোমার মায়ের চিকিৎসায় অবহেলা হবে।
বাকী ২২ হাজার টাকা উঠাতে প্রতিদিনেই রোগীর কাছে এসে চাপ দিতে থাকে ওই ডাক্তার ও তার লোকজন। ফিল্মি স্টাইলে ভয় দেখিয়ে রোগীর ছেলে ওহাব আলী ও তার স্ত্রী ইউপি সদস্য আলেয়া বেগমকে হাজির হতে বলে তারা। উপায়ান্ত না পেয়ে ওহাব আলী ৭ জুলাই রোগীর ফরিপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। রোগীর ছেলের বউ নারী ইউপি সদস্য আলেয়া বেগম জানান, আমার শাশুরিকে ফরিদপুর মেডিকেলের ডাক্তার সাইফুল স্যার প্রাইভেট ভাবে আগে দেখাইছি। তিনি অপারেশন করার কথা বলেন।
সেক্ষেত্রে বাহাত্তর হাজার টাকা লাগবে জানায়। কিন্তু আমাদের আর্থিক সমস্যা থাকার কথা জানালে তিনি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে পরামর্শ দেন। তিনি অনেক ভাল মানুষ। তিনিই বলেন সেখানে আমিই অপারেশন করি সমস্যা নাই। কিন্তু অপারেশনের দিন ডাক্তার রাজিব স্যার আমাদের কে ডাক্তার সাইফুল স্যারের সাথে দেখাই করতে দেয়নি। অপারেশনের দিন আমার স্বামীর কাছ থেকে রাজিব স্যার ২৮ হাজার টাকা নিছে। আর বাকী ২২ হাজার টাকার জন্য আমাদের হাসপাতালেই ঢুকতে দেয়নি। আর সেদিন আনসার দিয়ে আমাদের মারধরের ভয়ভীতি দেখায়।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করায় ৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে বৃদ্ধা লালমতি বেগম মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতাল ছাড়ার নির্দেশ দেন হাসপাতালের ডাক্তার।রোগীর মেয়ে মিতা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সকালে নার্সদের দিয়ে বলে যায় আপনাদের চিকিৎসা শেষ। আমার মায়ের মুমূর্ষু অবস্থা।
এখানে চিকিৎসা শেষ হলে তারাতো যেকোনো এক হাসপাতালে রেফার্ড করবে কিন্তু তা না করে বলে, যেখানে পারেন সেখানে নিয়ে যান। আমার ভাই সাংবাদিকদের কাছে ও ডিসি স্যারদের কাছে অভিযোগ করায় কৌশলে আমাদের নাম কেটে দিছে আমরা বুঝতেছি। কিন্তু ডাক্তারা তো আর সেটা স্বীকার করবেন না। তাই মাকে নিয়ে চলেই যায়।বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ওই অভিযুক্ত চিকিৎসক রাজিবুল কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি বিভাগীয় প্রধানের সাথে কথা বলতে বলেন।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা. হুমায়ন কবির জানান, এই হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক রোগীর স্বজনের কাছে টাকা দাবি করেনি। বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে, অপারেশনের দিন রোগীর স্বজনের একজন মৌখিক অভিযোগ করেন। সেসময় চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জেনেছি, ওনার পেটে ক্যান্সার রয়েছে। সেটি অস্ত্রপাচারের জন্য স্টাফিন মেথড নামক যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।
তবে আমাদের এখানে যন্ত্রটি আছে কিন্তু কার্টিজ নেই। কার্টিজ না থাকায় সেটি ঢাকার সাপ্লায়ারদের হাতে হাতে টাকা পরিশোধ করে রোগীর স্বজনরা। কিন্তু টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কোন প্রকার ক্ষোভ নয়, রোগীর স্বজনদের অনুমতিতেই ছাড়া হয়েছে রোগী কে।ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার জানান, বিষয়টির মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি, লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। এছাড়া রোগীকে চাপ দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও খোজ নিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রোগীর স্বজনরাই তার মাকে নিয়ে গেছে।
এদিকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ও এই মেডিকেল হাসপাতালটির নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগসহ সংবাদ কর্মীদের সাথে অশোভন আচরণের জন্য ফরিদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে গত ৭ জুলাই জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান তালুকদারের নিকট স্বাস্থ্য মন্ত্রী বরাবর পরিচালকের অপসারণের দাবীতে স্মারকলিপি দেয়া হয়।