ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিক আলমগীর অরণ্যর ওপর হামলাকারীরা ছাত্রলীগের সক্রীয় নেতাকর্মী। রয়েছে পদ- পদবী। তবে এমন ঘৃণিত কাজের পরও এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি সংগঠনটি। তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুধিমহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর অরণ্যর উপর হামলার ঘটনায় তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম বাদি হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ সহ আরো দুজনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় মামলা দায়ের করেন। এই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন,৩ নং দিগনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও শৈলকুপা সিটি কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি মেহেদী ইসলাম, যিনি এই মামলার প্রধান আসামি। রয়েছেন সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সেলিম খান ও ছাত্রলীগ কর্মী আলিমুর রহমান পিয়াস। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি শৈলকুপার দেবতলা গ্রামে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীরা শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মিশনের একনিষ্ঠ কর্মীবাহিনী। তার নেতৃত্বে চলা একটি সংজ্ঞবদ্ধ গ্রুপের এ ছাত্রলীগ কর্মীদের এখনো বহিস্কার না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।এবিষয়ে জানতে শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মিশনের মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো: বাবু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রবিরাবের মধ্যেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।
হামলার ঘটনায় উদীচী জেলা শাখার উপদেষ্টা স্বপন কুমার বাগচী বলেন,'একজন সাংস্কৃতিক কর্মীর ওপর সন্ত্রাসীরা দিনদুপুরে প্রকাশ্যে হামলা চালালো। এটা আমাদের জন্য অশুভ বার্তা। অতিদ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।'শৈলকুপা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ফিরোজ খান নুন বলেন,'একদল সন্ত্রাসী আলমগীর অরণ্যকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করা হয়েছে। তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। প্রশাসন যদি দ্রুত হামলায় জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার না করে আমরা আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।'
শৈলকুপা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।'এ ঘটনায় শনিবার ছাত্রলীগকর্মী আলিমুর রহমান পিয়াসকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের ওয়াপদা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আলিমুর রহমান পিয়াস উপজেলার দেবতলা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মী আলমগীর অরণ্যর ওপর হামলার ঘটনায় অন্যতম আসামি পিয়াসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।প্রসঙ্গত,গত ৩০ জুন বিকেলে উপজেলা শহরের কবিরপুর মোড় এলাকায় উদীচীর জাতীয় পরিষদের সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক আলমগীর অরণ্যর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ওই সময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সাংস্কৃতিক কর্মী আলমগীর অরণ্যর স্ত্রী উম্মে কুলসুম বাদি হয়ে শৈলকুপা থানায় মামলা দায়ের করেন।