বাংলাদেশের বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলায় ১০ প্রতিষ্ঠান এবং নতুন ৩৭ জন সহ মোট ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চার্জশিট গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর বিশেষ সিনিয়র দায়রা জজ আদালত। আজ (সোমবার, ২২ এপ্রিল) দুপুরে বিচারক মো. আলসামস জগলুল হোসেন চার্জশিট গ্রহণ করে অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) তাপস পাল জানান, আদালতের বিচারক রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে সিআইডি কর্তৃক দাখিলকৃত মানি লন্ডারিং মামলার চার্জশিটটি গ্রহণ করে সব আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। মামলায় প্রথম চার্জশিটের ১০ জনের মধ্যে ৩ আসামি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন, জামিনে রয়েছেন ৭ জন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘ঢাকার সিআইডির দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল ঘোষ, রেজাউল করিম পান্নু, রিজিয়া বেগম, আবু সাদেক মুকুলক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৬ জুন রাজধানীর কাফরুল থানায় অর্থপাচারের অভিযোগে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪(২) ধারায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত-রুবেল। এছাড়া মাদক কারবার, ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা। এসি, নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ট্রাক, বোল্ডার, পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। টাকার একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন দুই সহোদর।
মামলায় তদন্ত করে ২০২১ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার তৎকালীন (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ছিল। কিন্তু সেদিন মামলাটিতে কিছু অসঙ্গতি দেখতে পাওয়ায় আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সিআইডিকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মেনে নতুন করে আরও ৩৭ জনকে আসামি করে মোট ৪৭ জন ও ১০ প্রতিষ্ঠানকে আসামি করে চার্জশিট দেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন।
মামলায় পরবর্তী চুড়ান্ত চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন - ফরিদপুর সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরী, সাবেক পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র অমিতাব বোস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিমেষ রায়, ফরিদপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবু, জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সভাপতি ও জেলা মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর গোলাম মো: নাছির, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক দীপক মজুমদার, ঈশান-গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু, কানাইপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো: বেলায়েত হোসেন, বিটিভির ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা সাজ্জাদ হোসেন বাবু, ঠিকাদার খন্দকার শাহিন ওরফে পান শাহিন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সাহেব সরোয়ার, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জীবন, সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের তৎকালীন এপিএস অ্যাডভোকেট সত্যজিৎ মুখার্জি, ব্যবসায়ী আজমল হোসেন খান ওরফে ছোট আজম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা খলিফা কামাল উদ্দিন, খাবাসপুরের ব্যবসায়ী জামাল মিয়া, সাবেক কাউন্সিলর নাজিফুল ইসলাম তাপস, সাবেক যুবলীগ নেতা চৌধুরী মোহাম্মাদ হাসান, বরকত-রুবেলের দূরসম্পর্কের আত্মীয় হারুন মণ্ডল, বরকতের স্ত্রী আফরোজ পারভীন, রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ, ব্যবসায়ী বিলাল হোসেন, যুবলীগ নেতা স্বপন কুমার পাল, ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারী, ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন মোল্লা, আহসান হোসেন খান, আবজাল হোসেন খান শিপলু, মাহফুজুর রহমান মামুন, সুমন সাহা, আব্দুল জলিল শেখ, আনোয়ার হোসেন আবু, রফিক মণ্ডল, ব্যবসায়ী রিয়াজ আহমেদ,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিশান মাহমুদ শামিম এবং ঢাকা টাইমের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন।আদালত উল্লেখিত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ প্রদান করেন।