কুমিল্লার চান্দিনা আল আমিন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেইন কে জোরপূর্বক পদত্যাগের ঘটনায় পুর্ণবহালের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
একই ঘটনায় ভূক্তভোগী অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন ঘটনার সাথে জড়িত মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান আশ্রাফীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে মাদ্রাসার প্রধান গেইটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগে বলেন, মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান আশ্রাফী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার লোভে তার সহযোগী সহ তার অনুসারীদের উস্কেদিয়ে আমাকে (অধ্যক্ষ পদ থেকে) পদত্যাগ করতে বাধ্য করান। ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে বাগুর গ্রামের নাজমুল হাসান ও হারং গ্রামের মো. সাব্বির সহ অন্তত ৩৫জন বহিরাগত অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করে নানা হুমকি প্রদর্শন করে জোর পূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করান।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানায়- গত রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সাবেক কয়েকজন ছাত্র ও বহিরাগতরা মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে বিভিন্ন হুমকি, ধমকি ও হেনস্তা করে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়। আমাদেরও জোরপূর্বক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে বলেন। আবার কাউকে শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেইন কে পুনরায় বহাল করার জোর দাবি জানায়। মানববন্ধনে মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা আরও জানায়, মানববন্ধন শেষে আমরা মাদ্রাসায় পৌঁছালে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সাথে চান্দিনার জিনিয়াস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আমাদের মারধর করেন এবং বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেন।স্কুল খোলা থাকা সত্বেও আপনার স্কুলের শিক্ষক অন্য মাদ্রাসায় গিয়ে মানববন্ধনের বাঁধা দেয়ার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জিনিয়াস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম জানান, কখন কোন শিক্ষক কোথায় যায় এসব বিষয়টি আমি অবগত নই। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কেউ গিয়ে থাকলে সেটা আমার জানা নেই। অন্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমরা কোন প্রকার আলোচনা করতেও রাজি নই। আমার শিক্ষক দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি যদি আমার কাছে অভিযোগ করেন আমি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিত্বে ব্যবস্থা নিব।
জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ পত্রের দ্বিতীয় অভিযুক্ত ব্যক্তি নাজমুল হাসান বলেন, ঘটনার দিন আমি সেখানে উপস্থিত থেকে অধ্যক্ষ জাকির হোসেনকে তার বিগত সময়ের যত অপকর্মের কথা স্মরণ করে দিয়েছি মাত্র। ওনাকে (অধ্যক্ষ) জোর পূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়নি। ওনার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
মাদ্রাসাটির প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান আশ্রাফী জানান, আমি কখনও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার কথা চিন্তাও করিনি। সাবেক ছাত্ররা জোর পূর্বক আমার নাম ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করারও কেউ না। আমি কমিটির লোকজনদের সাথে কথাও বলেছি, এসব ঝামেলা নিয়ে আমি এ দায়িত্ব পালন করতে মোটেও ইচ্ছুক নই।এব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) জানান, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করার কথা শুনে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।