গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবির আন্দোলনে শেরপুর জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তদের করা হামলার ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে শেরপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।
গত ১১ আগস্ট রোববার জেলার (ভারপ্রাপ্ত) লিপি রানি সাহা বাদী হয়ে ১০-১২ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। শেরপুর জেল সুপার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করার জেলা কারাগার ঠিক করতে প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে জেলা গণপূর্ত বিভাগ।
এতে কারাগারের বিভিন্ন মালামালসহ তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও লুট হয়েছে ৯টি অস্ত্র। যার মধ্যে ৫টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।কারাগার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে ১০-১২ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, রামদা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা বন্দীদের ওয়ার্ড ভেঙে তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেন।
এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের হামলার মুখে কারারক্ষীরা অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় কারাগারের ৫১৮ জন বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারীরা কারাগারের ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের জন্য মজুত করা খাদ্যসামগ্রীসহ টাকা-পয়সা লুট করেন।সেই সঙ্গে কারাগারের প্রশাসনিক ভবনসহ মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, “শেরপুর জেলা কারাগার ভাংচুরের পরে কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমরা কারাগার সংস্কারের প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এরমধ্যে কিছু কাছ দ্রুত করে দেয়া হবে। আবার কিছু কাজ করতে সময় লাগবে। কয়েদিদের থাকার সেলগুলো আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করা সম্ভব।
তবে প্রশাসনিক ভবন, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাধ্যক্ষের বাসভবন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো সংস্কার করতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে।এ বিষয়ে শেরপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর খান বলেন, ঘটনার দিন কারাগারে আটক ৫১৮ জন বন্দী পালিয়ে গেছে। তবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যাওয়া বন্দী আমাদের সাথে আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করেছে।
তবে কারাগারে তাদের থাকার ব্যবস্থা, খাবারের ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও কারাগার থেকে লুট হওয়া ৯টি আগ্নেয়াস্ত্রের ইতোমধ্যে ৫টি উদ্ধার হয়েছে। সেগুলো সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছে। কারাগারের কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে সংস্কার কাজের জন্য শেরপুর গণপূর্ত বিভাগ এবং আসামি-কয়েদিদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য বরাদ্দ চেয়ে উর্দ্ধতন দপ্তরে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে।