সংবাদ সম্মেলন কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান। ভেতরে একের পর এক বোমা ফাটাচ্ছিলেন ফরচুন বরিশালের মুশফিকুর রহিম। যাঁরা ফরচুন বরিশালকে ‘বুড়োদের দল’ বলেছেন, তাঁদের এক হাত নিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। নিজের ফিটনেসকে যেকোনো তরুণ ক্রিকেটারের ফিটনেসের চেয়েও ভালো দাবি করেছেন মুশফিক।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকেও ছাড়েননি। বিপিএলের মান নিয়ে প্রধান কোচের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। মুশফিকের এসব কথায় নুরুলের অপেক্ষাও বাড়ছিল।সাংবাদিকদের মনেও কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। মুশফিকের কথার সূত্র ধরেই সে প্রশ্নগুলোর জন্ম। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক এসে দাঁড়িয়ে থাকায় সংবাদ সম্মেলন আর দীর্ঘ করা যাচ্ছিল না। সে জন্যই সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে মুশফিক বের হওয়ার পর কৌতূহলী মন নিয়ে তাঁর পিছু নেওয়া। ড্রেসিংরুমের দিকে যাওয়া মুশফিকের কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন আক্ষেপ করেন?’ উত্তরে মুখে চওড়া হাসি টেনে বেশ জোর দিয়ে মুশফিক পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘না! না! (অবসর নেওয়া নিয়ে) রিগ্রেট করি না। রিগ্রেট করার কী আছে? (হাসি)’মুশফিকের সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স বেশ ভালো। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিক। ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সেই পোস্টে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের হয়ে অন্য দুই সংস্করণ টেস্ট ও ওয়ানডেতে মনোযোগ দেওয়ার জন্যই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মুশফিক।
এরপর দুটি বিপিএল খেলে ফেলেছেন মুশফিক। দুটিতেই তিনি দুর্দান্ত। গতবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের ফিনিশারের ভূমিকায় খেলে ১৫ ইনিংসে তাঁর রান ৩৫৭, গড় ৩৯, স্ট্রাইক রেট ১৩২। এবার ১৪ ইনিংসে মুশফিকের রান ৩৩ গড় ও ১২৩ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৭। গতবারের মতো এবারও তাঁর দল বিপিএলের ফাইনাল খেলছে। শুধু এই দুই বিপিএল নয়, বাংলাদেশের একমাত্র টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় মুশফিক বরাবরই ‘হাই স্ট্রাইক রেট-হাই অ্যাভারেজ’ ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বেশি ১২৫ ম্যাচ খেলা মুশফিকের ৩২৪৯ রান তামিম ইকবালের (৩৩৮৩) পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দুই হাজারের বেশি বিপিএল রান ও ১৩০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে মুশফিকের (১৩২) আগে শুধু একজনই, তিনি সাকিব আল হাসান (১৩৯)।
এ তো গেল মুশফিকের রানের সংখ্যা, অভিজ্ঞতা ও ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলার দক্ষতাও যোগ করুন। মুশফিকের ফিটনেস নিয়ে তো কখনোই প্রশ্ন ছিল না। এমন ক্রিকেটারকে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই টি-টোয়েন্টি দলে পেতে চাইবে? এই প্রশ্নেও মুশফিকের কাটখোট্টা জবাব, ‘এটা তো এখন ভালো খেলার পর বলছেন। আগে তো কেউ এটা বলেননি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘আমি শুধু একটা প্রশ্ন করি, আমি কি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছি নিজের ইচ্ছায়? এতটুকু শুধু বলার আছে।’
কথাটা শোনার পর কয়েক মুহূর্তের জন্য মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষের সামনে একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসে। সাংবাদিকদের ছোট্ট জটলাটা থমকে যায়, মুশফিক কয়েক পা এগিয়ে যান। একটু দূরে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে মুশফিক আবার বললেন, ‘যখন অবসর নিয়েছিলাম, তার আগের এক মাস একটু দেখে নিয়েন। আর কিছু বলার নেই।’আমিরাতের সেই এশিয়া কাপের দলে মুশফিককে সুযোগ দেওয়া নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এশিয়া কাপের আগে ও পরে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ, এমন গুঞ্জনও শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই তুঙ্গস্পর্শী সময়ে চারপাশে ভারী দেয়াল তুলে রাখলেও বাইরের আওয়াজ কানে আসবেই। মুশফিক যেতে যেতে সে সময়ের কথাটাই হয়তো মনে করিয়ে দিলেন। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে মুশফিকের বাধ্য হয়ে বিদায় জানানোর কারণও হয়তো সেটিই।(সূত্র;প্রথম আলো)