ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১৭ জনই প্রধান শিক্ষকসহ তার আত্মীয়স্বজন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়টিতে 'পরিবারতন্ত্র' প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই বিদ্যালয়টিতে কর্মরত ৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী বাইরের। বাকিরা প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের নিকটাত্মীয়। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই স্কুলে থাকা প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
সম্প্রতি নিয়োগবিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুই আত্মীয়কে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেন লুৎফর রহমান, যা বাতিলের দাবি জানিয়ে ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করেছিলেন বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি বেলাল উদ্দীন।জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সদর ইউনিয়নের তোররা বাজারে অবস্থিত তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়।
নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষক নিজের ভাই, স্ত্রী, মামাশ্বশুর, ভাইয়ের ফুফুশাশুড়ি ও ভাগ্নেসহ আত্মীয়দের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন।বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ২১ জন কর্মরত। এরমধ্যে ১৭ জনই প্রধান শিক্ষকের পরিবার ও নিকটাত্মীয় ও স্বজন।
এরা হলেন- সহকারী প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক মোছা. পারভীন আকতার প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী, সহকারী মৌলভী আবেদ আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো চাচা, সহকারী শিক্ষক মসলিম উদ্দিনও চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক মোছা. সাবিনা খাতুন চাচাতো বোন, সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদিন আপন চাচাতো ভগ্নিপতি, কম্পিউটার শিক্ষক জসিমউদদীন চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) আমিনুল ইসলাম মামাশ্বশুর, সহকারী শিক্ষক জসিম উদ্দিন চাচাতো বোনের চাচাশ্বশুর, সহকারী শিক্ষক মোছা. হোসনেয়ারা বেগম লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাইয়ের ফুফুশাশুড়ি, সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন ভাগ্নে, অফিস সহকারী ইউসুফ লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, পিয়ন আব্দুস সালাম লুৎফর রহমানের ভাগ্নে, চতুর্থ শ্রেণির এমএলএস মসিউর রহমান প্রধান শিক্ষকের বোনের ছেলে, অফিস সহায়ক কাঞ্চন লুৎফর রহমানের ছোট ভাই এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী আকতারুলও নিকটাত্মীয়।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি যা করেছি নিয়ম মেনে করেছি। একই পরিবারের প্রার্থী নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তিনি।
তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান এ প্রতিনিধিকে জানান, তারা নীতিমালা ও নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ দিয়েছেন কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব। এনং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।