বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন তুঙ্গে! এ সময় শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেমন আক্রান্ত হয় তেমনি মারাও যায়।
প্রথম থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও ডেঙ্গু থেকে সাবধান হতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে প্রচলিত বেশ কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। সেই ভুল ধারণাগুলো আমাদের প্রত্যেকেরই জানা দরকার। এ ভুল ধারণা বিষয়ে অপরকেও সচেতন করে তোলা উচিত। ডেঙ্গুর এই প্রকোপে সচেতনতার বিকল্প নেই।
ভুল ধারণা:অনেকের ধারণা ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ। কেউ কেউ মনে করেন, ডেঙ্গু জ্বরের রোগীকে স্পর্শ করলেই রোগটি স্পর্শকারীর মাঝে ছড়িয়ে যাবে।
বৈজ্ঞানিক সত্য:ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলেই, একই বিছানায় ঘুমালে, একই তোয়ালে ব্যবহার করলে কিংবা একই কাপড় ব্যবহার করলে, একই গ্লাস কিংবা প্লেট ব্যবহার করলে অন্যদেরও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় কোনো বাধা নেই। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পৃথক করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।
ভুল ধারণা:একবার ডেঙ্গু জ্বর হলে বাকি জীবনে আর কখনো ডেঙ্গু জ্বর হবে না।
বৈজ্ঞানিক সত্য:সাধারণের এই ধারণাটি পুরোপুরি সত্য নয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ রয়েছে। এই ৪টির মধ্যে যেকোনো ১টি থেকেই ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। কাজেই ডেঙ্গু ভাইরাসের যেকোনো একটি সেরোটাইপে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভবিষ্যতে ভাইরাসের সেই সেরোটাইপটি দ্বারা আর আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। কারণ শুধু সেই সেরোটাইপটিতে রোগীর আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাসের বাকি ৩টি সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ঠিকই রয়ে যায়। তবে কেউ যদি পৃথক পৃথকভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ দ্বারা জীবনে ৪ বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি জীবনে আর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।
ভুল ধারণা:ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়।
বৈজ্ঞানিক সত্য:ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায় না। শুধু ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস মশার কামড়ে যেকোনো ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহন করে। কাজেই বাতাসে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু উড়ে বেড়ানোর সুযোগ নেই।
ভুল ধারণা:ডেঙ্গু জ্বর মানেই মৃত্যু ঝুঁকি।
বৈজ্ঞানিক সত্য:অনেকে এখনও মনে করেন, ডেঙ্গু জ্বর মাত্রই মৃত্যু ঝুঁকি এবং এতে প্রায়ই রোগী মারা যায়। এই ধারণা একেবারেই ভুল। সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতভাগ রোগীই ভালো হয়ে যান। যদিও বলা হয় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুহার ৫ থেকে ১০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে, এই হার ১ শতাংশের নিচে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাবার কোনো কারণ নেই।
ভুল ধারণা:জ্বর কমে গেলেই সব বিপদ কেটে গেল।
বৈজ্ঞানিক সত্য:ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনও কখনও ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক ডাক্তারও মনে করেন-রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হবার সময় আসলে এটাই। এসময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাবার পরবর্তী কিছুদিন হলো ক্রিটিকাল পিরিয়ড। এসময় সবার সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বরং জ্বর চলে যাওয়ার পরের সময়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ভুল ধারণা:মা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না।
বৈজ্ঞানিক সত্য:ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসবাহিত, মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। কাজেই, আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
ভুল ধারণা:হোমিওপ্যাথির ওষুধ ডেঙ্গু প্রতিরোধ করে।
বৈজ্ঞানিক সত্য:ডেঙ্গু প্রতিরোধক কোনো ওষুধ এখনো বের হয়নি। কেউ যাদি তেমন দাবি করেন, তা ঠিক নয়।