যশোর পৌরসভা ও হরিজনদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিরসন হয়নি। এদিন পৌরসভার পক্ষ থেকে নিজস্ব জনবল দিয়ে কয়েক জায়গার ময়লা পরিষ্কার করা হলেও শহরের অধিকাংশ স্থানে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে। আর হরিজনরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তারা পৌরসভা শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
যশোর পৌরসভা ও হরিজনদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিরসন হয়নি। এদিন পৌরসভার পক্ষ থেকে নিজস্ব জনবল দিয়ে কয়েক জায়গার ময়লা পরিষ্কার করা হলেও শহরের অধিকাংশ স্থানে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে। আর হরিজনরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তারা পৌরসভা শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
গত শনিবার যশোরের রেলবাজার হরিজন পল্লীর মিটার আগুনে পুড়ে যায়। তিনদিন অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগ-১ এর পক্ষ থেকে নতুন মিটার স্থাপন করে লাইন সংযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি পৌরসভার পক্ষ থেকে হরিজনদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিষয়ে কোনো চেষ্টা করেনি। লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার প্রতিবাদে হরিজনরা ওইদিন থেকে কর্মবিরতি পালন করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তাদের কর্মবিরতির কারণে শহর জুড়ে ময়লার স্তুপে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে পৌরবাসীর চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে বুধবার পৌর পরিষদ নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৌরসভার পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার শ্রমিক দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার শুরু করে। এদিন ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, কুইন্স হাসপাতালের সামনে, বিএড কলেজের সামনে, কাঁঠালতলা ও পালবাড়ী এলাকায় ময়লা পরিস্কার করেছে। এটা যথেষ্ট নয় মনে করে পৌরবাসি। কারণ শহরের প্রধান প্রধান পয়েন্ট ব্যস্ততম দড়াটানা, গাড়িখানা, চৌরাস্তা, মনিহার এলাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় এখনো ময়লার ভাগাড় রয়ে গেছে। অনেক জায়গার ময়লার দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে দোকানদাররা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু জানান ১,২,৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ময়লা পরিস্কার করা হয়েছে। বাকি ৫টি ওয়ার্ড ও দড়াটানা, চিত্রার মোড়সহ অনেক স্থানের ময়লা পরিষ্কার করা হবে। তবে একটু সময় লাগবে। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলার পর হরিজনদের সাথে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় আলোচনায় বসা হয়। কিন্তু তারা পৌরসভার কথা মানেনি। এদিকে জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া যশোর পৌরসভা শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের দেয়া স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে আমরা পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকরা বংশ পরমপরায় যশোর পৌরসভায় কাজ করে আসছি। পাক- ভারত উপমহাদেশের একটি নিস্পেষিত নির্যাতিত শোষিত,অবহেলিত সম্প্রদায়ের নাম হরিজন বা পরিচ্ছন্নতা শ্রমিক। পৌরসভার জন্মলগ্ন থেকে নগরীর মানুষের মলমূত্রসহ সকল প্রকার ময়লা পরিস্কার করে নগর জীবনকে আধুনিক পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে অবদান রাখছি। কিন্তু আমাদের জীবনের কোন আধুনিকতার ছাপ নেই। বাঁচার মতো মুজুরি নেই, বসবাসের উপযোগী বাসস্থান নেই, নেই শিক্ষা চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার ভোগের সুবিধা ৩০ দিন কাজ করে অসুস্থ হলে পাই না চিকিৎসা সুবিধা। এমনকি অসুস্থতাজনিত ছুটি পায় না। একটি অনুপস্থিত হলে চাকরিচ্যুত হতে হয়। শারিরীক অক্ষমতা বা কোন শ্রমকিকের মৃত্যুতে পায়না কোন সুযোগ-সুবিধা। আমাদের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র,পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক নেই। কখনও ২২ টাকা কখনও ৩৩ আবার কখনও ৩৮ টাকা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি। যা বেড়ে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দাঁড়িয়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করায় আমরা সংকটের মধ্যে জীবনযাপন করছি।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিলাল হরিজন, সাধারণ সম্পাদক হিরণ লাল সরকার, পৌর শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সাজেন ডোম। স্মারকলিপি গ্রহন করার পর জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার সমস্যা ও দাবি দাওয়া নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তাদের জানান।