চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সাবেক ইউপি সদস্য দীপক চন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানুষের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা থানায় ও আদালতে মামলা দায়ের করেন। তিনিও স্থানীয় সালিস-দরবার না মেনে হাইকোর্ট দেখিয়ে আসছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৬ নং গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দীপক চন্দ্র বসুর বিরুদ্ধে একই এলাকার একাধিক পরিবারের সম্পত্তি জ্বাল দলিল, বিএস দাগে অতিরিক্ত বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়া ও জোরপূর্বক সম্পত্তি দখল করে দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
প্রাথমিক তথ্য ও আদালতে মামলার আলোকে জানাযায়, সাইসাঙ্গা সমাইর বাড়ীর যঞ্জেশ্বর চন্দ্র বসুর ছেলে শ্রী দীপক চন্দ্র বসু ও ভাই শ্রী সুখেন্দু চন্দ্র বসু এদের মোট বিএস খতিয়ানে সাইসাঙ্গা ৩০৮ নং মৌজা, ৪৮০ নং দাগে ২ একর ২৭,২১২ খতিয়ানে ১২ একর ৯৪ শতাংশ ভূমি। ১৯৮৫ সালে শ্রী আদিনাথ সোমের কাছ থেকে জ্বাল দলিলের মাধ্যমে শ্রী দীপক চন্দ্র বসু ৫ একর ৬১ শতাংশ ভূমি দানপত্র করে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ। এছাড়া ১৯৮৮ সালে শ্রী ভূপতি রঞ্জন সোমের কাছ থেকে ২ একর ৫৭ শতাংশ সাইসাঙ্গা মৌজা সাফ কাবলা দলিল করে নেয়। অর্থাৎ দুই দলিলে শ্রী দীপক চন্দ্র বসু জায়গা নেয় প্রায় ৮ একর অথচ ১৫ একর ভূমি জোরপূর্বক বিএস খতিয়ানে প্রতারনার মাধ্যমে বেশি উঠিয়েছে বলে অভিযোগ করে ভোক্তভুগিরা।
এসব জায়গার মূল মালিক ছিলেন সাইসাঙ্গা গ্রামের সমাইর বাড়ীর শ্রী ভৃপতিরঞ্জম সোম। তার কাছ থেকে ৬ শতাংশ ও একই বাড়ীর সরেরঞ্জম সোম ও ভাই শ্রী আদি নাথ সোমের কাছ ৬ শতাংশ ভূমি ক্রয় করেন ষোলদানা হইদার বাড়ির মৃত আলি মিয়ার ছেলে আব্দুল মজিদ ও মুসলিম গং।
পরবর্তী ২০২৩ সালে চাঁদপুর কোর্টে বিজ্ঞ ফরিদগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আব্দুল মজিদ গং এসআর এ্যাক্ট ৪২ ধারা মোতাবেক স্বত্ব ঘোষণার মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ৩২৫/২৩।
বিবাদী পক্ষ গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের মৃত যঞ্জেশ্বর চন্দ্র বসুর ছেলে দীপক চন্দ্র বসু ও সুখেন্দ্র চন্দ্র বসুর কাছ থেকে সাবেক ৪৮০ নং সাইসাঙ্গা মৌজা ৬০ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৪৮ শতাংশ বাদী পক্ষ বুঝে পেলেও ১২ শতাংশ ভূমি নিয়ে মূলত মামলাটি চলমান রয়েছে।
একই পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সিএস ষোলদানা ৩০৯ নং খতিয়ানে, ৪০৩ নং মৌজা এবং আরএস অনুযায়ী ৩৩৭ খতিয়ানে বিবাদীর পক্ষের কাছ থেকে আরো ১২ শতাংশ ভূমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
শুধুমাত্র এ বাদী পক্ষের ২৪ শতাংশ ভূমি নিয়ে তালবাহানা করছে এমন নয়, আরো পক্ষদ্বয়ের সাথে বছরের পর বছর ধরে প্রতারনা করে আসছে সাবেক ইউপি সদস্য দীপক চন্দ্র বসু। এছাড়াও সাইসাঙ্গা গ্রামের মৃত সংকর চন্দ্র সোমের স্ত্রী তুলসী রানী সোমের সাথে দীপক ভূমি নিয়ে প্রতারনা করে আসছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী শাহাজান মিয়া, সিরাজ ও খলিল গংদের সাথেও এ ইউপি সদস্য অত্যাচার চালিয়েছে। তাদের প্রায় ৬৫ শতাংশ ভূমি এ ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে।
তুলসী রানী সোমের ছেলে সঞ্জয় ও আব্দুল মজিদের ছেলে নুরুন নবী বলেন, আমাদের সম্পত্তি নিয়ে দ্বীপক চন্দ্র বসু ও তার ছেলে সুজন চন্দ্র মিলে সন্ত্রাসী কায়দা চালিয়ে আসছে। আমরা এ নিয়ে এলাকায় শালিশ বৈঠকের ডাক দিলে তারা কোন কাগজপত্র দেখাচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের একটি পুকুর জোরপূর্বক দখল করে মাছ চাষ করে আসছে সাবেক এ ইউপি সদস্য দীপক। সে ও তার ছেলে সুজন আইন সমাজ কোন কিছুর তোয়াক্কা করছে না। আমরা এ ভূমিদস্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
সাইসাঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ইতিপূর্বে একাধিকবার আমরা সালিসি বৈঠক বসার চেষ্টা করেও দীপক চন্দ্র বসু পাত্তা না দিয়ে বরং হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট দেখায়।
গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষের সাথে যে বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে তা সমাধান করতে। কিন্তু দীপক চন্দ্র বসু কোন কাগজপত্র উপস্থাপন করতে চায়না যে কারনে বছরের পর বছর জটিলতা আরো বাড়ছে।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য দীপক চন্দ্র বসু বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়, আমার যা করনীয় তা সঠিক স্থানে জবাব দেবো। আমি এই জমি ক্রয় সূত্রে মালিক। যা আদালতে প্রমান হবে।