দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নে গত কয়েক মাসে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। চরাঞ্চলের আমার ইউনিয়নের, নন্দ-লালপুর, হাওলাদার কান্দি, কুদ্দুস মোল্লার কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি, কাঁচিকাটাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে। কৃষকরাও আতঙ্কে। আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। এ বিষয়ে ইউনিয়নের সব জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ ১৯ জুন সকালে সদরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভাঙ্গার জিক্কার মোড় নামক স্থানে রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এতে ভাঙ্গাবাসীর মধ্যেও রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী আড়িয়াল খাঁ চরে ও সদরপুরের পদ্মা নদীর তীর এলাকায় বসবাস করা মানুষের মধ্যে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারের (চন্দ্রবোড়া) আতঙ্কে জেঁকে বসেছে। কৃষক জমির ফসলসহ গবাদি পশুর খাবার সংগ্রহ করতেও ভয় পাচ্ছেন। একের পর এক বিষধর সাপটির দেখা মিলছে সদরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়াও গত বুধবার সকালে সদরপুর - ভাঙ্গা সীমান্তবর্তী ধিক্কার মোড়ে এই সাপের দেখা মেলে। ইতিমধ্যে চরাঞ্চলে এই সাপের কামড়ে ছয় মাসে ঠান্ডু মাতুব্বর, আনোয়ার শেখ, শুভা মাতুব্বর, জাহিদ ফকির, শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদের মধ্যে দুই জন শিশু ও তিন জন প্রাপ্তবয়স্ক।
স্থানীয়রা জানান, সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদসংলগ্ন নন্দ-লালপুর, হাওলাদার কান্দি, চুঙা কান্দি, হকিয়াতপুর, বিশ্বাস কান্দি, কোটি কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি ও কুদ্দুস মোল্লার কান্দি চর এলাকার শতাধিক কৃষক জমি চাষ করেন। দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়ার বেশির ভাগ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয় প্রতি বার। তাই এই চরে কৃষকেরা ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের চাষ শুরু করেন। এরই মধ্যে ভুট্টা ঘরে তুলে তিল ও ধানের চাষ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার সকালে দুই কৃষক আমন ধানে কেটে রেখে দেন। পরে দুপুরে আঁটি বাঁধা সেই ধান তুলতে গিয়ে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। তাদের দুই জনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তাদের দুই জনকে যখন সাপে কামড় দেয়, তখন অন্য শ্রমিকরা ধান রেখে চলে যান। এমনকি ভয়ে গরুর ঘাস কাটতেও আসছেন না অনেকে। নুরুউদ্দিন সরদার কান্দি এলকার রাজা মল্লিক জানান, তিনি গত কয়েক দিনে তিনটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়েছেন। এছাড়া কয়েক দিন আগে ইউনিয়নের নন্দ-লালপুর গ্রামের শেখ খবির নামে এক কৃষকও এই সাপ দেখতে পান। রাসেল ভাইপার সাপ দেখেছেন হাওলাদার কান্দির জুয়েল হাওলাদার, নন্দ-লালপুরের আয়নাল ফকির এবং একই গ্রামের মোশারফ হোসেন।
দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চল জুড়ে রাসেল ভাইপার সাপের কারণে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ মাঠে যেতে চাচ্ছেন না এবং ধান, ভুট্টা কাটতে শ্রমিকও পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে কৃষকরা সাপ দেখে পিটিয়ে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলছেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নে গত কয়েক মাসে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। চরাঞ্চলের আমার ইউনিয়নের, নন্দ-লালপুর, হাওলাদার কান্দি, কুদ্দুস মোল্লার কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি, কাঁচিকাটাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে। কৃষকরাও আতঙ্কে। আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। এ বিষয়ে ইউনিয়নের সব জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ ১৯ জুন সকালে সদরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভাঙ্গার জিক্কার মোড় নামক স্থানে রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এতে ভাঙ্গাবাসীর মধ্যেও রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওমর ফয়সল বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সাপে কাঁটা রোগীদের অ্যান্টি-ভেনম ইনজেকশন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাপে কাঁটা রোগী বা পরিবারের কেউ আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে ওঝার কাছে না নিয়ে সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হবে। সাপে কাটার পর সময় মতো চিকিৎসা দিতে পারলে রোগী বেঁচে যাবে। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডাক্তার মাইনুদ্দিন সেতু বলেন রাসেল ভাইপারের কামড়ের আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেনাম ঔষধ রয়েছে আমরা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে পারব।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রবের কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে কৃষকদের কৃষিকাজ করার সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি ও রাসেল ভাইপার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতা (গাম-বুট) দেওয়া হয়েছে।’
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।