ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের বহরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে নগরকান্দা থানায় বাদী হয়ে মামলা করেছে নিহত কবির ভূঁইয়ার স্ত্রী মোনজিলা বেগম (৪৪) ।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নং- ০৮। এছাড়া অজ্ঞাত হিসেবে ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায় , শামা ওবায়েদকে ১ নং হুকুমের আসামি এ মামলায় করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় ৩৬ জনের মধ্যে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বাবুল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল (৫০) ও তার ভাই সাবেক ছাত্র নেতা মাসুদুর রহমান তৈয়ব ও রয়েছেন।
ফরিদপুরের নগরকান্দায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) শহীদুল ইসলামের সমর্থক কবির ভূঁইয়াকে (৫০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদকে (৫২) আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।এ ব্যাপারে শামা ওবায়েদ জানান , আমি শুনেছি নগরকান্দার ঘটনায় আমাকে ও আসামী করা হয়েছে । আমি ঐ ঘটনার দিন ঢাকায় অবস্থান করেছি ।
তবে আমি এই হত্যা কান্ডের সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাই । তিনি আরো জানান , শহীদুল ইসলাম বাবুল বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ঘোরামি লোকজন এনে এলাকার বিভিন্ন স্থানে তোরণ তৈরি করে শোডাউন দিয়েছে । যা এই মুহূর্তে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ধরণের কর্মকান্ড না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন , তারপরে ও শহীদুল ইসলাম বাবুল এ শোডাউন করেছে । শহীদুল ইসলাম বাবুল আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে বাদীকে উৎসাহী করেছে ।
মামলার ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও লস্করদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল তালুকদার জানান , ঘটনার সময়ে আমি লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সাধারন জনগনের সেবা দিচ্ছিলাম । ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না । নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল জানান , সংঘর্ষের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম নগরকান্দা পোড়াপাড়া যাওয়ার রাস্তায় ছিলাম । কিন্তু কবির ভুঁইয়া নিহত হয়েছে নগরকান্দা ব্রীজের গোড়ায় , ঐ স্থানে আমি ছিলাম না । তিনি আরো জানান কবির কৃষক দলের কোন সদস্য না । তিনি তরিকত ফাউন্ডেশনের সদস্য বলে শুনেছি ।
সাবেক ছাত্রনেতা মাসুদুর রহমান তৈয়ব জানান , কবির ভুঁইয়া যেস্থানে নিহত হয়েছে আমি ঐ এলাকায় ছিলাম না । আমি পেট্রোল পাম্পে ছিলাম । আমার বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ । ফরিদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ জানান , নগরকান্দায় বিএনপির হাতকে দুর্বল করার জন্য কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে শামা ওবায়েদ এর রাজনীতি ধ্বংস করার পায়তারা করছে ।
তিনি আরো জানান , অতীতে শহীদুল ইসলাম বাবুল আওয়ামীলীগের নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পুত্র লাবু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় নগরকান্দায় একাধিকবার প্রবেশ করেছেন । অতীতে তার ছত্র ছায়াতেই নগরকান্দা এলাকায় এসে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছিলো । নগরকান্দার একাধিক এলাকাবাসীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান , শামা ওবায়েদ এর বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল নোংরা রাজনৈতিক চক্রান্ত করে যাচ্ছে । আমরা এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই । এ ব্যাপারে নিহত কবির ভুইয়ার স্ত্রী ও মামলার বাদী মোনজিলা জানান , আমি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আমার স্বামী হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করছি ।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নিহতের স্ত্রী মোনজিলার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২১ আগস্ট) কৃষক দল নেতা শহীদুল ইসলামের মোটর শোভাযাত্রা যোগে ঢাকা থেকে নগরকান্দা উপজেলায় যাবার পথে নগরকান্দা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় শামা ওবায়েদ ও শহীদুল ইসলাম বাবুল এর পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে নগরকান্দা পৌরসভার ছাগলদী মহল্লার বাসিন্দা কবির ভূঁইয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।