দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বেরুয়া বাঁশের (কাঁটা যুক্ত বাঁশ) ফুলের দানা থেকে খাওয়ার উপযুক্ত চাল আবিস্কার করে এলাকায় চা ল্যের সৃষ্টি করেছেন কৃষিশ্রমিক সঞ্জু রায় (২৪)। সাঞ্জু রায় উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের শিমুল চন্দ্র রায়ের ছেলে। পেশায় একজন কৃষিশ্রমিক। সাঞ্জু রায়ের আবিস্কৃত বাঁশের ফুলের চাল নিজের পরিবারের খাবার জোগান দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় উৎসুজ গ্রামবাসীর মাঝে বিক্রি করছেন ৪০ টাকা কেজিদরে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বেরুয়া বাঁশের (কাঁটা যুক্ত বাঁশ) ফুলের দানা থেকে খাওয়ার উপযুক্ত চাল আবিস্কার করে এলাকায় চা ল্যের সৃষ্টি করেছেন কৃষিশ্রমিক সঞ্জু রায় (২৪)। সাঞ্জু রায় উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের শিমুল চন্দ্র রায়ের ছেলে। পেশায় একজন কৃষিশ্রমিক। সাঞ্জু রায়ের আবিস্কৃত বাঁশের ফুলের চাল নিজের পরিবারের খাবার জোগান দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় উৎসুজ গ্রামবাসীর মাঝে বিক্রি করছেন ৪০ টাকা কেজিদরে।
গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে সাঞ্জু রায়ের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ীর আঙ্গীনায় বস্তার মধ্যে কিছু বাঁশের ফুল থেকে বের করা জব আকৃতির ধান শুকানো জন্য রোদে দিয়েছেন তার স্ত্রী সাথী রায়। সেখানেই জানা যায়, সাঞ্জু রায় পার্শ্বের বারাই ডাঙাপাড়া গ্রামে বাঁশের বাগানে ঝরে পড়া বাঁশের ফুল আনতে গেছেন।
বাঁশের সেই ঝরে পড়া ফুল থেকে পাওয়া জব আকৃতির দানাগুলো পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে তারপর সেটি গ্রামের জাকির হোসেনের হাসকিং ছাটাই করে চাল আকৃতির দানা বের করা হয়। দানাগুলো চাল আকৃতির হওয়ায় সেটি স্থানীয়ভাবে গ্রামবাসীর কাছে বাঁশের চাল হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। বাঁশের ফুলের দানা থেকে বের হওয়া স্থানীয় ভাষায় বাঁশের দেড় বস্তা চাল সাঞ্জু রায়ের বাড়ীর বারান্দায় মজুদ রাখা হয়েছে। আর চাল করার জন্য কিছু বাঁশ ফুলের দানা রোদে শুকানোর জন্য আঙ্গিনায় দেওয়া আছে। এগুলো শুকিয়ে মিলে নিয়ে চাল বের করা হবে। সাঞ্জু রায়ের বাঁশের চাল গ্রামের অনেকেই কিনে নিয়ে খিচুরী আর আটার রুটি হিসেবে খেলেও ভাত হিসেবে এখনও সেভাবে খাচ্ছেন না লোকজন। বাঁশের চাল বের হচ্ছে এমন সংবাদে আশপাশের লোকজন প্রতিদিন সাঞ্জু রায়ের বাড়ীতে আসছেন, বাঁশের চালের গল্প শুনছেন। অনেকে দু-চার কেজি চাল কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।
সাঞ্জু রায়ের প্রতিবেশি গৃহবধূ দুবলা রানী (৪০), কুসুম বালা (৫০), সাবিত্রি রানী (৪২) ও কালীপদ রায় (৫৮) বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝরে পড়া বাঁশের ফুল বাড়ীতে এনে সেগুলো পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেওয়ার বিষয়টি প্রথম প্রথম তাদের কাছে সাঞ্জু রায়ের পাগলামী মনে করতেন গ্রামের লোকজন। তবে পরে সেগুলো থেকে জব আকৃতির দানা বের হওয়া এবং সেই দানা হাসকিং মিলে নিয়ে ছাটাই করে চাল সাদৃশ্য খাদ্য বের হওয়া সবাইকে চমকে দিয়েছে। বর্তমানে সাঞ্জু বাঁশের চাল অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে বেশি বাঁশের চাল দেখতে আসছে লোকজন। সাঞ্জুর জন্য গ্রামের নামটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাঞ্জু রায়ের ছোটবোন জামাতা খোকন পাল বলেন, সাঞ্জ রায় সব সময় কারিগরি কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন। এরজন্য তার বাড়ীতে একজন ইলেক্টনিক কাজকর্মের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি দরকার সাঞ্জু রায়ের বাড়ীতে তার সবগুলোই আছে। মাঝে মধ্যে সে নষ্ট হওয়া বৈদ্যুতিক বাল্ব কিনে এনে সেই বাল্বগুলো কেমন করে আবার ঠিকঠাক করে প্রত্যেকটিতে ৫ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করে দেন। এগুলো থেকেই দেখা যায় সাঞ্জু রায় সব সময় নতুন কিছু আবিস্কার করতে আগ্রহী থাকেন। একইভাবে বাঁশের চালও এর মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাঁশের ফুলের দানা থেকে চাল সাদৃশ্য দানা আবিস্কারকারী সাঞ্জু রায় বলেন, এক সঙ্গে কৃষিশ্রমিকের কাজ করার সময় ৬৫ বছর বয়স্ক কালী রায় নামের এক কৃষিশ্রমিকের পরিচয় ঘটে। কালী রায় তাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঁশের ফুলের দানা থেকে চাল বের করার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কালী রায়ের শোনানো সেই গল্প থেকেই সাঞ্জু রায়ের আগ্রহ জন্মায় বাঁশ ফুলের দানা থেকে চাল সংগ্রহের। প্রথমে বাঁশ ফুলের দানা থেকে চাল বের করে বাড়ীতে ভাত, খিচুরী ও আটা তৈরি করে রুটি খাওয়া শুরু করেন। এতে স্বাদ ও খাওয়া দুটোই ভালো লাগায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করেন বাঁশের ফুলের ঝরে পড়া দানা সংগ্রহ করা। এ সময় মাঠেঘাটে তেমন কাজকর্ম না থাকায় বেকার হয়ে বাড়ীতে বসে না থেকে বাঁশের ঝরে পড়া ফুলের দানা সংগ্রহ করে সেখান থেকে চাল সংগ্রহ করে চলেছেন। প্রতিদিন সংগ্রহ করা ঝরে পড়া বাঁশের ফুলের দানা থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি চাল পাওয়া যাচ্ছে। যা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুইমণ চাল বিক্রি হয়েছে এবং বাড়ীতে এখনও মজুদ রয়েছে প্রায় তিন মণ চাল। প্রতিদিনই চালের মজুদ বাড়ছে। সাঞ্জু রায়ের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দুই শতাংশ জমির ওপর বাড়ী ছাড়া অন্যকোনো জমিজমা নেই। এজন্য বাড়ীতে বসে থাকলে পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানরা কি খাবে আর কিভাবে সংসার চলবে। এজন্য বাড়ীতে বেকার হয়ে বসে না থেকে বাঁশের ফুলের দানা সংগ্রহ করে চাল বের করছেন সাঞ্জু।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, বিষয়টি জেনেছেন। তবে এটি গবেষণার বিষয়। গবেষণা করে খাদ্যপণ্য হিসেবে অনুমোদন পাওয়া গেলে তখন এ বিষয়ে বলা যাবে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) আ লিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান বলেন, বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এটা প্রথম জানলেন। এমন কথা এর আগে দেশের কোথাও শোনা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে এর সঠিকতা নিরুপণ করা হবে।