বিদ্যুৎ খাতে কোন সুখবর নেই । আছে মূল্য বৃদ্ধির খবর ।সাথে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সংযোগ ।গত ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ( আই এম এফ ) প্রতিনিধি দলের সাথে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎ সচিব মো: হাবিবুর রহমান এর নেতৃত্বে বৈঠক হয় ।
আইএমএফ ২০২৩ সালে ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেন ।ঋণ কর্মসূচির শুরুর পর দু‘দফায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি সরকার ঋণ পেয়েছেন । ৩য় দফা ৭০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার কথা চলতি মে মাসে । ঋণ অনুমোদনের যে সব শর্ত দেয়া আছে । তার একটি বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা । এ লক্ষ্যে ভর্তুকির চাপ সমন্বয় করতে সরকার প্রতি তিন মাস পর পর বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন। অর্থাৎ বছরে চার বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে । আগামী তিন বছরে এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে । যা মোট ভর্তুকির সমান বা কাছাকাছি । সরকারের পক্ষ থেকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে এ কথা জানানো হয় ।
বেসরকারি বিদ্যৎ কেন্দ্র গুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় ; তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইএমএফ । উল্লেখ্য বেসরকারি বিদ্যৃৎ কেন্দ্র গুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক চুক্তি অনুসরণে প্রতিটি কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ ( ভাড়া ) দিতে হয় । এর উত্তরে বিদ্যুৎ বিভাগ আইএমএফ প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন ; চুক্তি থাকাই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে । তবে সরকার ইতিমধ্যে ‘বিদ্যুৎ নেই,বিলও নেই‘ এ পদ্ধতি চালু করেছে । এতে নতুন করে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দেয়ার সুযোগ আছে । বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বেশি হারে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া, বিপরীতে স্বল্প আয়ের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কম হারে বিল নেয়া হচ্ছে কি না ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ বিভাগ জানান বহু বছর ধরেই এ পদ্ধতি চলমান । বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগ আইএমএফকে জানান ; আগামী বছরের মার্চে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক ও বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যাবে । এ বিষয়ে আইএমএফ জানতে চান :এর পর বিদ্যতে ভর্তুকি আরও বাড়বে কি না ? উত্তরে বিদ্যৎ বিভাগ জানান : না । কারণ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রচলিত উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে উৎপাদন খরচ তুলোনায় অনেক কম হবে ।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) বিদ্যুৎ বিক্রয় করে ৪৩ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে । ওই বছরে সরকারের বিদ্যুৎ ভর্তুকি বরাদ্ধ ছিল ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা । বর্তমান প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাইকারি দরে ৭টাকা ৪ পয়সা । তবে আইএমএফের শর্ত পূরণে বিদ্যুতের ভর্তুকি প্রতাহার করা হলে এর দাম ১২ টাকার উপড়ে যাবে ।
আর ভোক্তা পর্যায়ে দাম হবে ১৫ টাকা । যা এখন ৮টাকা ৯৫ পয়সায় পাওয়াচ্ছে । তথ্য মতে (২০২২-২০২৩)অর্থবছরে পিডিবি ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া মেটাটে । কিন্তু রাষ্ট্রের এ বিশাল অংকের টাকা ভাড়া মিটিয়ে জনগন এর কি সুফল পেল ? বিশেষজ্ঞদের মতে ; বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চাপ ভোক্তা নিতে পারবেনা । বিদ্যুতের সাথে উৎপাদন মুখি কল কারখানা জড়িত । বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এ দুই কৌশলগত পণ্য । এদের যে কোনো একটার দাম বৃদ্ধি হলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় । এমনিতে সাধারন মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে । তাই বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে মেয়াদ শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন না করা । বিদ্যুৎ নেই বিল নেই শর্তে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে চুক্তি করা ।বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি খতিয়ে দেখা সহ ইত্যাদি পদক্ষেপ সরকার নিতে পারেন । তবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলে তা হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত । উল্লেখ্য আইএমএফ দলটি ২৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্য্ন্ত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ও যাবেন ।