উপকূলীয় জেলা ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও কালাবাদর নদীতে জেলেরা ফের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নদীর আধিপত্য নিয়ে সংঘাত, সংঘর্ষ, খুনোখুনি, হিংসা, হানাহানি আর রক্তপাতের খেলা দানা বেঁধে উঠেছে। এখানকার নৌপথে পুরনো মোড়কে নতুন সন্ত্রাসী কার্যক্রম সাধারণ জেলেদের ভাবিয়ে তুলেছে। কথিত মৎস্য অভয়ারণ্যে জলদস্যুদের যন্ত্রণায় সাধারণ জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরতে ভয় পাচ্ছেন। জেলেদের ভাষ্যমতে, উত্তাল নদীর তর্জন-গর্জনকে ভয় না পেলেও জলদস্যুদের ভয়ংকর হিংস্রতায় তারা নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। জেলেদের অভিযোগ, প্রশাসনিকভাবে নিরাপত্তার কথা বলা হলেও জেলেদের নিরাপত্তার জন্য আজো কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে জলদস্যুরা যখন-তখন জেলেদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। গত শনিবার রাতে জেলা সদরের পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের অদূরে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার অপরাধে মো: হোসেন (৩০) নামের জেলেকে গুলি করে হত্যা করে জলদস্যুরা। দস্যুদলের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন আরো তিন জেলে। তারা হলেন আব্বাস (৩২), কাঞ্চন (৩৪) এবং সোহেল (২৯)। ঐ রাতেই তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে ভোলার মেঘনায় জেলেরা মাছ শিকার করছিলেন। এসময় একদল জলদস্যু জেলেদের ট্রলারে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। জেলেরা প্রতিহত করতে চাইলে তাদের উপর গুলি চালায় দস্যুরা। এতে জেলে হাসান নিহত হন এবং আহত হন আরও ৩ জেলে। আহত ও নিহত জেলেদের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার বাঘার হাওলা গ্রামে বলে জানা গেছে। এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের ৩টি দল রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ভোলা নৌপুলিশের ইনচার্জ মোঃ শাহিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হঠাৎ করেই মেঘনায় জলদস্যুদের উপদ্রব বাড়ায় সাধারণ জেলেদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলেরা বলছেন, নদীকে শান্ত ও নিরাপদ রাখতে নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ড ও নৌবাহিনী মোতায়েন থাকলেও নৌ-দস্যুতা দমনে কার্যত দৃশ্যমান কোন ফলাফল দেখছেনা কেউ। সরেজমিন ইলিশা এলাকার মেঘনা পাড়ে গেলে কথা হয় মৎস্যজীবী আবুল কালাম, দাইমিদ্দিন ও সাফিজল হকের সাথে। তারা বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের জমানায় মেঘনা নদীতে যারা আধিপত্য ও নৈরাজ্য চালাতো জুলাই বিপ্লবের পর তারাই জার্সি বদল করে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এ সমস্ত দস্যুরা এতই ভয়ঙ্কর যে, তাদের ভয়ে সাধারণ জেলেরা মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হয়। জেলেরা জানান, গত ১৫ বছরে ভোলার মেঘনায় জলদস্যুদের আক্রমনে শতাধিক জেলের জীবনহানীর ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের কোনো দপ্তরের তালিকায় তাদের নাম নেই। তাদের পরিবারের খবর রাখেনি কেউ। ওই পরিবারগুলো পায়নি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। এ ব্যাপারে ভোলার পুলিশ সুপার মোঃ শরীফুল হক বলেন, মেঘনায় দস্যুতা দমনে জেলা পুলিশ ও নৌপুলিশ একযোগে কাজ করছে। শনিবার জেলে হত্যার বিষয়টির সাথে কোন গ্রুপ জড়িত সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভোলার পার্শ্ববর্তী জেলার দূর্বৃত্তরাও এখানকার নদনদীতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ভোলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্তা।