যশোরে একরাতে কুয়েত প্রবাসীসহ দুই যুবক খুন হয়েছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির বাদিয়াটোলা ও বাহাদুরপুর আড়পাড়ায় ঘটনা দুটি ঘটে। এরমধ্যে একজনকে বাড়ির গেটের সামনে থেকে মাথায় গুলি ও অপরজনের গলা কেটে হত্যা করা হয়।
নিহতরা হলেন চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাদিয়াটোলা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আব্দুল খালেক মন্ডলের ছেলে কুয়েত প্রবাসী মেহের আলী (৪০) ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মোদাচে্ছর হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন মিঠু (৩৩)।
নিহত মেহের আলীর ভাই আব্দুল্লাহ মন্ডল জানান, তার বড় ভাই মেহের আলী কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। গত ২৬ জুলাই দেশে ফিরেছেন। কারা কি কারণে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করলো তাৎক্ষণিকভাবে কারণ বলতে পারেননি। তবে আব্দুল্লাহ মন্ডলের ধারণা দুর্বৃত্তরা তার ভাই মেহেরকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। খুনিরা আগে থেকেই বাড়ির আশে পাশে অবস্থান করছিলো। হত্যা মিশনের আগে বাড়ির চারপাশে থাকা সিসিটিভির ক্যামেরাও কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। যাতে ক্যামেরায় খুনের দৃশ্য ভিডিও না হয়।
তিনি (আব্দুল্লাহ) আরও জানান, ভাই রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে কলাপসিবল গেট খুলে রাস্তার দিকে পা বাড়াতেই তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। আব্দুল্লাহ মন্ডলের দাবি, রাজনৈতিক কোন্দলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মেহের আলীকে খুন করেছে।নিহতের স্ত্রী জানান, গত বুধবার তারা সকলে বাহাদুরপুরে খালু আনোয়ার হোসেনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন।
রাতের খাওয়া শেষে তার স্বামী কলাপসিবল গেট খুলতেই গুলির শব্দ শোনা যায়। বাইরে এসে দেখেন তার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খন্দকার রেজয়ান উদ দারাইন জানিয়েছেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মেহের আলী মারা যান। খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করা হয়েছে। যে কারণে মাথা ভেদ করে গুলি বের হয়ে গেছে।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, মেহের আলী বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। বিদেশ যাওয়ার আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা একাধিক মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করেছে। উপায় না পেয়ে তিনি এক সময় কুয়েত চলে যান। ৩ বছর আগে মেহের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। তখনও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বলে শোনা যাচ্ছে। সর্বশেষ ১৫ দিন আগে ছুটিতে আসার পর সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। খুনিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেছেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান।
এদিকে, একই রাতে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে মিঠু নামের যুবককে খুন করা হয়। নিহতের স্বজনরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় চা খাওয়ার কথা বলে বন্ধুরা মিঠুকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত ৮টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। অনেক খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে আড়পাড়া গ্রামের বিলপাড়ার মিলনের বাড়ির উত্তর পাশে মিঠুনের মরদেহ পড়ে ছিলো। রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যার পর লাশ সেখানে ফেলে রেখে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত মিঠু টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। তার ভাই ডিটু আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি (ডিটু) নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর তুহিনের সাথে চলাফেরা করেন। ভাইয়ের সাথে শত্রু তার জের ধরে দুর্বৃত্তরা মিঠুকে খুন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, কুয়েত প্রবাসী মেহের আলী ও টাইলস মিস্ত্রি মিঠু হত্যার খবর শুনেছি। তবে এখনো কেউ মামলা করতে আসেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ এজাহার দিলে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে। তবে পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার পর মামলার তদন্ত শুরু করবেন বলে জানান ।