নির্মাণ শেষের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি যশোর রেলস্টেশনের চার নম্বর রেললাইনের পাশের লোডিং-আললোডিং প্লাটফর্ম।
করোনা অতিমারির সময় সেখানে যখন কোনো প্লাটফর্ম ছিল না; তখনও সেখানে কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। ভাঙাচোরা রাস্তা ও অবকাঠামোগত অন্যান্য অসুবিধার মধ্যেও সেখানে মালামাল খালাস চলতো। কিন্তু প্লাটফর্ম নির্মাণসহ সংলগ্ন লাইনটির সম্প্রাসরণ হলেও সেখানে এখন আরা মালামাল ওঠানো-নামানো করছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় এটি যানবাহনের স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
ব্যবসায়ীর বলছেন, বেশ কতগুলো কারণে প্লাটফর্মটি ব্যবহার করছেন না তারা। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো রেলপথে পণ্য আমদানিতে এখন অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। একটি ‘রেক’-এ যতগুলো বগি থাকে তার সবগুলো ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন ভারত থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে না। এক্ষেত্রে সবকটি বগি পূর্ণ হতে অনেক সময়; অন্তত ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। ট্রাকে করে পণ্য আনলে এখন এক থেকে দুই দিনের বেশি সময় লাগে না। যার কারণে ট্রেনে করে পণ্য আনায় আগ্রহ কমে গেছে।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, করোনার মধ্যে যখন কোনো লোডিং-আনলোডিং প্লাটফর্ম ছিল না তখনও তারা সেখানে কোটি কোটি টাকার পণ্য খালাস করেছেন। স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে কাজটি করতেন তারা। কিন্তু স্থানীয় একজন ব্যক্তি রেলওয়ে বিভাগের কাছ থেকে প্লাটফর্মটিতে মালামাল খালাসে শ্রমিক সরবরাহের একটি ‘স্যাংশন’ (বরাদ্দ) নিয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে এখন প্লাটফর্মটিতে পণ্য খালাস করতে হলে তার সরবরাহ করা শ্রমিক নিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এতে ‘লেবার কস্ট’ (শ্রমিক খরচ) বেশি পড়ছে। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির সরবরাহ করা শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো ছাড়াও মালামাল খালাসে বগি প্রতি তাকে ১০০০ টাকা দিতে হবে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা সেখানে মালামাল খালাসে আগ্রহী না।
ভারত থেকে রেলযোগে পণ্য আমাদনি শুরু পর ব্যবসায়ীরা দাবি জানালে লাইন সম্প্রসারণসহ প্লাটফর্মটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে প্লাটফর্ম ও এটির সংলগ্ন রাস্তা পুঃনির্মাণ ও রেললাইন সংম্প্রসারণ এবং মালামাল রাখার জন্য একটি গুদাম নির্মাণ করা হয়।
রেলওয়ের যশোর প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২২ সালে লোডিং-আনলোডিং প্লাটফর্ম ও এটির পাশে যানবাহন চলাচলের রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামো ও রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। প্লাটফর্মটি মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি ‘রেক’-এ ৪০ থেকে ৪২টি বগি থাকে। চার নম্বর লাইনটি সম্প্রসারণের আগে সেখানে ২০টির বেশি মালবাহী বগি রাখা যেতো না। এতে যশোর জংশনের অন্যান্য রেললাইনে বগি রাখায় ক্রসিংয়ে সমস্যা হতো। সেই সাথে মালামাল খালাসেও সময় বেশি লাগতো। লাইনটি সম্প্রসারণের ফলে ওই লাইনে এখন ৪০টির বেশি বগি রাখা যায়। সেই সাথে একই সময় বহুসংখ্যক বগি থেকে মালামাল আনলোড সম্ভব। মূলত মামলাল খালাস সহজ ও এ কাজে সক্ষমতা বৃদ্বির জন্য এ প্লাটফর্মটির নির্মাণ ও লাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, যশোর জংশনের লোডিং-আনলোডিং প্লাটফর্মে মালামাল রাখার জন্য শেড এবং গুদামসহ অন্যান্য আরো অনেক অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। এ ছাড়া এখন ‘ডিটেনশন’ না থাকায় ট্রাকে করে দু’দিনের মধ্যে বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট দিয়ে ভারত থেকে পণ্য বাংলাদেশে আনা যাচ্ছে। এসব অনেক কারণে তারা ট্রেনে মালামাল আমদানি ও প্লাটফর্মটিতে মালামাল খালাস করছেন না।
তিনি বলেন, বর্তমানে ট্রেনে মালামাল আমদানির ক্ষেত্রে ওয়াগন ডিটেনশন কস্ট অনেক বেশি। এই উচ্চ খরচের কারণেও ট্রেনে মালামাল আমাদানিতে অনাগ্রহ ব্যবসায়ীদের।
তবে এ ব্যাপারে যশোর রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ^াস জানিয়েছেন, ভারত থেকে পণ্য আমাদানির ক্ষেত্রে একটি প্রকল্প চালু ছিল। সেই সময় প্রচুর পরিমাণ আমদানি পণ্য যশোর জংশনে আনলোড হয়েছে।
তিনি জানান, ডলার সংকটসহ অন্যান্য আরো অনেক কারণে আমদানি ব্যবসায়ে সংকট চলছে। ফলে আমদানি কম হওয়া প্লাটফর্মটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।