মিরাজুল কবীর টিটো সদর উপজেলা প্রতিনিধি যশোর : মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি নেমে গেলেও শহরের অনেক স্থান হাঁটু থেকে কোমর সমান ডুবে আছে।
রোববার রাতে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে চাঁচড়ার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা শহর ও শহরতলীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এদিকে, পুকুর তলিয়ে গিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় মাছ চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। যশোরে বিমান ঘাঁটি মতিউর রহমানের আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, রোববার রাত থেকে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এরমধ্যে রোববার রাতে ১৪৪ মিলিমিটার ও সোমবার ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এটি এ বছরের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি। এর আগে ২ আগস্ট ১২৬ মিলিমিটার ও তার আগে ৮৩ এবং ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
দীর্ঘ সময়ের এই ভারি বৃষ্টিতে শহর জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিস মোড়, বেজপাড়া চোপদার পাড়া, জমাদ্দার পাড়া, কবরস্থান রোড (মিঠু লেন), আনসার ক্যাম্প, রেল রোড আশ্রম মোড়, শংকরপুর, খড়কী, বারান্দীপাড়া, সিটি কলেজ পাড়া ও পাইপ পট্টিসহ অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।যশোরের প্রধান বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র চাঁচড়া থেকে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রোববার রাতের বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র তলিয়ে যায়। বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফরমার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
ওজোপাডিকো যশোরের বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১’র নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন জানান, ফায়ার সার্ভিস এসে কিছু পানি নিষ্কাসন করার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।রাতে প্রচন্ড বৃষ্টিতে মাছের পুকুর ও ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আনিচ গোলদার মৎস্য খামারের সত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান। তিনি জানান, চাঁচড়া এলাকায় প্রায় ২ হাজারের বেশি পুকুর আছে। বৃষ্টিতে অধিকাংশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। একই কথা জানান সততা সৃষ্টি মৎস্য খামারের সত্ত্বাধিকারী কামাল আহমেদ।এদিকে বৃষ্টিতে পুরো ৭ নম্বর ওয়ার্ড তলিয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফিরোজ মাহমুদ জানান, চাঁচড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের পূর্ব দিকে দেয়ালের পাশে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পানি বের হওয়া ড্রেনের মুখ।
পৌরসভা থেকে পরিস্কার না করায় ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এর একটু দূরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ড্রেন। ড্রেনের পানি হরিণার বিল হয়ে খালে গিয়ে চলে যায়। ড্রেন সরু হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে না পারায় ওয়ার্ড জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ১১ লাখ টাকা খরচ করে পৌরসভা হরিণার বিলে খাল পরিস্কার করেছে। কিন্তু নামমাত্র কাজ কোনো উপকারে আসেনি। একই দাবি করেন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কালাম, এসএম বাপ্পাসহ আরো অনেকে। জানা গেছে, জলাবদ্ধতায় বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় এ ওয়ার্ডের অনেক পরিবার শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।একই অবস্থা খড়কী শাহ আব্দুর করিম সড়কের বাসিন্দাদের। বৃষ্টিতে খড়কী এলাকার অধিকাংশ তলিয়ে যায়। কারবালা এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বাড়ির ভেতর পানি ঢুকে গেছে।
চার খাম্বার মোড়, ফায়ার সার্ভিসের সামনে, নিরালাপট্টি ও আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমি সামনের রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।বৃষ্টির পানিতে শুধু শহর নয় গ্রামও তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ কৃষি জমি পানির নিচে। তালবাড়িয়া গ্রামের আয়ুব হোসেন নামে এক কৃষক জানান, কিছু দিন আগে ধান লাগিয়ে ছিলাম। বৃষ্টিতে সেগুলো তলিয়ে গেছে। পানি কমলেও সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাবে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, বৃষ্টিতে অনেক কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে নতুন লাগানো ধানের চারা ও সবজি। পানি যদি তাড়াতাড়ি না নামে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও সবজির ক্ষতি হবে।