ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবোয়ালমারী জর্জ একাডেমীতে অপরাজনীতি, শিক্ষার পরিবেশে অবনতি, অব্যবস্থাপনা ও র্যাগ ডে'র নামে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সাতটি সামাজিক সংগঠন।
সোমবার (২০ নভেম্বর) পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র চৌরাস্তায় ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও তার অনুসারী ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য ও শিক্ষকদের অপসারণ ও বরখাস্তের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন - বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কতিপয় সদস্যের স্বেচ্ছাচারিতা, অপরাজনীতি ও অব্যস্থাপনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে, তারা নিজেদের স্বার্থে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গুন্ডামী, অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ কর্মকান্ডের উদ্বুদ্ধ করছে। এদের অপসারণ ও বরখাস্ত করা না হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন সচেতন অভিভাবক মহল ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এতে বক্তব্য রাখেন বোয়ালমারী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, সাবেক সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম জহুরুল হক জহুর, বোয়ালমারী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কবি কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী রক্ষা কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামাল খান টুনু , সাধারণ সম্পাদক মানোয়ার হোসেন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা ছবদু মিয়ার পৌত্র, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. পলাশ মিয়া, অভিভাবক কমিটির নির্বাচিত সদস্য সম্পা সাজ্জাদ, সামাজিক সংগঠন ক্ষুধার্তের আত্মচিৎকারের সভাপতি শামীম প্রধান, ব্লাড ব্যাংক বোয়ালমারীর সভাপতি ডিসি মুশফিক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান পনির, হাবিবুর রহমান, ভবানী বিশ্বাস, ওয়ালিদিন মুরসালিন তুলিপ, গাজী রাহাতুজ্জামান শুভ, জুবায়ের হোসাইন, অনিক প্রমুখ।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সাপ্তাহিক চন্দনা সম্পাদক কাজী হাসান ফিরোজ বলেন- আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান জর্জ একাডেমীতে শুরু হয়েছে অরাজকতা, অনৈতিকতা, নোংরামী। এক শিক্ষকের নোংরা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পথে। যারা এটা শুরু করছে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা আরও বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম জহুরুল হক জহুর বলেন - জর্জ একাডেমীতে যা শুরু হয়েছে তা লজ্জাজনক। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির হতাশজনক রেজাল্ট, অপরাজনীতি, র্যাগ ডে'র নামে নোংরামি যা দেখে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। এ অব্যবস্থাপনা,নৈরাজ্যের অবসান না হলে আমরা রাস্তা ছাড়বো না।
অভিভাবক কমিটির সদস্য সম্পা সাজ্জাদ বলেন - সম্প্রতি জর্জ একাডেমীর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অশ্লীল র্যাগ ডে উদযাপনের নানা ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে ছেলে মেয়েদের পোশাকে কুরুচিপূর্ণ, আপত্তিকর শব্দ লেখা যেটা মুখে আনতেও আমি লজ্জা পাচ্ছি। শুনেছি এর আয়োজক ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষক কৃষ্ণ সাহা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য অশোক বিশ্বাস। এই অশোক বিশ্বাস পরীক্ষার হলে ঢুকে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র কেড়ে নেওয়া সহ নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ব্যাংক হিসাব পরিবর্তন করে অর্থ আত্মসাৎ করতে পায়তারা চালিয়েছে। এদের বিচার দাবি করছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা ছবদু মিয়ার পৌত্র পলাশ মিয়া বলেন - জর্জ একাডেমীর পবিত্র অঙ্গনে নোংরামির অনুমোদনকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, কৃষ্ণ সাহাসহ জড়িতদের বরখাস্ত করা না হলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।
সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুর রশিদ বলেন -র্যাগ ডে এর নামে অবক্ষয়মূলক কার্যক্রম উদযাপন হাইকোর্ট নিষিদ্ধ করেছে। হাইকোর্ট ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম র্যাগ ডে পালনের অনুমতি দিয়েছে বলে জানা গেছে।এর সাথে কৃষ্ণ সাহা, অশোক বিশ্বাসও নাকি জড়িত অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি রাখছি।
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীগণ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যাগ ডে উদযাপন করে। এতে সাউন্ড বক্সের গানের তালে তালে ছেলে-মেয়েদের এক সাথে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে ফটোসেশান ও অনুভূতি ব্যক্ত করার নামে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে একে অপরের গায়ে থাকা টিশার্টে যৌন উত্তেজক, কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ও প্রকাশ অযোগ্য নানা শব্দ লিখে দিতে দেখা যায়। সেসব কুরুচিপূর্ণ লেখা টিশার্ট পরে শিক্ষকদের সাথে ঘুরে বেড়াতে ও ফটোসেশন করতে দেখা যায়। র্যাগ ডে'র কর্মসূচির নানা ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এতে শতবর্ষী বিদ্যালয়টির মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবি করে অনেক অভিভাবক ও সুশীল সমাজ।