চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মিঠার দোকান এলাকায় এক যুবকের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য নিথর শরীরের ওপর এলোপাতাড়ি ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন মিজানুর রহমান জয়। একটি হত্যা মামলার এজাহারে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বলছে, ওই সময় মিজানুর রহমান জয় ঘটনাস্থল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কেরানীহাটে অবস্থান করছিলেন।
মিজানুর রহমান জয় সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ছোট ঢেমশা এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে। তিনি ছদাহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি।
গত ২৮ মে দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মিঠার দোকান এলাকার জাকির স্টোরের সামনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন আওয়ামী লীগ কর্মী দিনমজুর মোহাম্মদুল হক (৩৩)। মোহাম্মদুলকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হন মেজ ভাই জিয়াবুল হকও (৩৬)।
মোহাম্মদুল হকের বাড়ি সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আজিমপুর এলাকায়। তিনি মিঠার দোকান এলাকায় স্থানীয় মাওলানা ফিশ ফিড কোম্পানিতে দিনমজুরের কাজ করতেন।
এ ঘটনায় নিহত মোহাম্মদুলের বড় ভাই এনামুল হক বাদী হয়ে মিজানুর রহমান জয়সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার তিন নাম্বার আসামির তালিকায় নাম রয়েছে জয়ের।
ওই মামলার এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হলেন— সাতকানিয়ার ছদাহা আজিমপুর ৫ নং ওয়ার্ডের মো. সোলেমানের ছেলে মো. সাইফুল (২৪), আজিজুল হক প্রকাশ রাজা মিয়ার ছেলে আরিফুল ইসলাম সোহাগ (২৫), ফেরদৌসের ছেলে রায়হান (২২), আনিছুর রহমানের ছেলে তাসিব (২২) ও শফিকুর রহমানের ছেলে নুরুল ইসলাম ২৪), ছোট ঢেমশা ৬ নং ওয়ার্ডের নুরুল আবছারের ছেলে সাকিব প্রকাশ টোকাই সাকিব (২৪) ও মাহবুবুর রহমানের ছেলে আরফিন সুলতান (২২)।
মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে, তিন নাম্বার আসামি মিজানুর রহমান জয়ের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তিনি মোহাম্মদুলের নিথর শরীরের ওপর এলোপাতাড়ি ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন।
স্থানীয় ছাত্রলীগ সভাপতিকে মামলায় ষড়যন্ত্রমূলক আসামি করার প্রতিবাদে সোমবার (১০ জুন) বিকালে সাতকানিয়ার একটি রেস্টুরেন্টের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছদাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তেব্যে ছদাহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন কাদের তাহিল বলেন, ‘ঘটনার দিন মিজানুর রহমান জয় দুপুর ১টা ২৪ মিনিট থেকে দুপুর ৩টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত কেরানীহাটে অবস্থান করছিল। যার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজে রয়েছে’।
মামলার বিবরণে ঘটনার আগের দিনের যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঠাকুরদীঘি থেকে মিঠার দোকানের চলাচলের রাস্তা দিয়ে মিজানুর রহমান নিয়মিত যাতায়াত করেন। যেহেতু সে ছদাহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি তার পদচারণা বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে। তার মানে এই না যে, সে কাউকে হুমকির উদ্দেশ্য যাওয়া-আসা করছে।
সালাউদ্দিন কাদের তাহিলের দাবি, এজাহারে মিজানুর রহমান জয়কে সরাসরি আসামি করলেও ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। এজাহারে হত্যাকাণ্ডের সময় বলা হয়েছে দুপুর ২টা। অথচ ওই সময় জয় কেরানীহাটে তার নিকটস্থ আত্মীয় স্বজন এবং ইউসিবি ব্যাংকে অবস্থান করছিলো।
ওই দিনের ওই সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গণমাধ্যমকর্মীদের দেখিয়ে বলেন, ফুটেজই প্রমাণ করে মিজানুর রহমান নির্দোষ। ওই সময়ের জয়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করলে আরও প্রামাণ মিলবে বলে জানান তাহিল। শুধুমাত্র বর্তমান সাংসদ এম এ মোতালেবের সমর্থক হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে জয়কে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান ছদাহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন কাদের তাহিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছদাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, ছদাহা ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ছদাহা ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ ওলামিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন, ছদাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আজাহার উদ্দিন, ছদাহা ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ছদাহা ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্কাস সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, ছদাহা ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম রুবেল, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, ছদাহা ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন, ছদাহা ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাক, সাধারণ সম্পাদক ফারুক, ছদাহা ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সবুজ সওদাগরসহ ছদাহা ইউনিয়ন যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।