সাভারে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে আনন্দপুর এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ি দখলে ব্যর্থ হয় প্রতিপক্ষ। পরে মীমাংসার কথা বলে কৌশলে বাড়ির আসবাবপত্রসহ সর্বস্ব লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ।
শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লায় ভুক্তভোগী ইভান ইবনে আসাদের বাড়িতে এ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগীর বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, গ্যাসের চুলা, চাল-ডাল ও পরনের কাপড়সহ ঘরে থাকা ৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, খাট-সুকেস ও আলমারিসহ প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বরফ বানানোর মেশিনের যাবতীয় যন্ত্রাংশ লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এর আগে দুপুরে ওই বাড়িটি দখলে নিয়ে হামলা চালায় সাবেক কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ ও তার ছেলে রাজীব বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ইভান ইবনে আসাদ, তার বাবা আসাদুর রহমান এরশাদ, চাচা ইউসুফ আলী চুন্নু ও চাচাতো ভাই আবির মাসুমসহ পরিবারের সদস্যরা। পরে ভুক্তভোগীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল করেন। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সাভার মডেল থানার এসআই হারুনুর রশিদ । এ ঘটনায় আহতদেরকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে হামলাকারী অভিযুক্তরা হলেন- সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আনন্দপুর এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে আয়াল হক ওরফে গেদু কবিরাজ (৬১), তার ছেলে রাজীব হোসেন (৩৬), ইমন (২১) ও আঁখি ওরফে লেডি আঁখিসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে।
ভুক্তভোগী ইভান বলেন, পৈতৃক পাঁচ শতাংশ জমিতে স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে একটি বরফকল পরিচালনা করছেন তিনি। এ সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। তারপও জমিটি দখলের পাঁয়তারা করছে গেদু বাহিনী। একাধিকবার হামলা চালিয়ে আমাকে মারধর ও ঘরবাড়ির ভাংচুর করে তারা। নিজের ভিটেমাটি রক্ষা ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সাভার মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করেছি। এর আগেও আমাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলা চলমান।
ইভানের চাচা চুন্নু বলেন, গত বছরের ৩০ আগস্ট বাড়ি দখল করে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করেন গেদু কবিরাজ। একই দিনে ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী ফাতেমা জেসমিনকে মারধরের ঘটনায় গেদু কবিরাজ ও তার ছেলে রাজীবসহ আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। চলতি মাসে আবারও বাড়ি দখলে চেষ্টা চালায় গেদু বাহিনী। সর্বশেষ রোববার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আমাদেরকে মেরে আহত করেছে।
ইউসুফ আলী চুন্ন আরও বলেন, আমার ছোট ভাই আলেক মো. নান্নু ও স্থানীয় মিষ্টু নিজ চোখে দেখেছে আয়নাল হক গেদুর শ্যালক মামুন তার ছেলে আসিফ ভাতিজা মোরশেদ সহযোগী রানার মাধ্যমে আমার ভাতিজার বাড়িতে থাকা সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় রাতেই আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
ভুক্তভোগীর বাবা আহত আসাদুর রহমান এরশাদ বলেন, আমার মা ১৯৯৬ সালে ঢাকা কালেক্টরেটের ৫ শতাংশ সম্পত্তি সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের মাধ্যমে আমার নামে লিখে দেন। দীর্ঘদিন আমি প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার ছেলে ইভান ওই সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছে।
তবে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে অভিযুক্ত আয়নাল হক গেদু বলেন, আমি ক্রয়সূত্রে জমির মালিক হয়ে তা ভোগদখলে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু জমিতে থাকা ইভান ইবনে আসাদ ও তার স্বজনেরা আমাকে বাধা দেয় এবং আমার ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছে।
সাভার মডেল থানার এসআই হারুনুর রশিদ বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। জোরপূর্বক কারও জমি দখল চেষ্টা বা মালামাল নিয়ে যাওয়া অবৈধ। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।