কয়রায় সুইডিশ রাজকন্যা গল্প শুনে, মাছ ধরা দেখে, ছবি তুলে এক বেলা কাটলো!

বিভাশ সরকার প্রকাশিত: ২০ মার্চ , ২০২৪ ০৭:১৩ আপডেট: ২০ মার্চ , ২০২৪ ০৭:১৩ এএম
কয়রায় সুইডিশ রাজকন্যা গল্প শুনে, মাছ ধরা দেখে, ছবি তুলে এক বেলা কাটলো!
খুলনার কয়রায় সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন। সুন্দরবন ঘেঁষা উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামে তিনি মঙ্গলবার সকালে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন। এদিন সকাল আটটার দিকে তিনি খুলনার কয়রায় পৌঁছান এবং দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত থাকেন।

খুলনার কয়রায় সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন। সুন্দরবন ঘেঁষা উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামে তিনি মঙ্গলবার সকালে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন। এদিন সকাল আটটার দিকে তিনি খুলনার কয়রায় পৌঁছান এবং দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত থাকেন।

এই সামান্য সময়ের মধ্যে তিনি সুন্দরবনঘেঁষা উপকূলের মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের কথা শোনেন এবং স্বচক্ষে দেখেন। তিনি স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গল্প করেন, এক নারীর মাছ ধরা দেখেন, তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলেন। ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ী পান্ডুগাজী ইউনাইটেড একাডেমির মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন সকাল আটটার দিকে। এরপর সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সড়কপথে সুন্দরবন পার্শ্ববর্তী নয়ানী গ্রামে যান। সেখানে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ও সুইডেনের সহায়তায় নির্মিত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পানি শোধনাগার থেকে স্থানীয়দের পানি সংগ্রহ কার্যক্রম দেখেন এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এসময় নারীদের কাছে জানতে চান, জলবায়ু পরিবর্তন তাঁদের জীবনে কি প্রভাব ফেলেছে আর কি ধরনের চ্যালেঞ্জ তাঁদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নয়ানী গ্রামের লিপিকা বিশ্বাস এসময় প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাঁকে বলেন, লবণাক্ততার কারণে একসময় খাবার পানির সংকটে তাঁদের ভুগতে হতো। গ্রামের পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। সেই পানি পান করে রোগবালাই লেগেই থাকত। পানি শোধনাগার হওয়ার পর সহজে লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন তাঁরা। তিনি এ জন্য রাজকন্যাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনি শঙ্কর রায় বি.সরকার-কে বলেন, প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া গ্রামে এসে বেড়িবাঁধের ওপর কিছুক্ষণ হাঁটেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রামবাসী তাঁর কাছে আরও পানি শোধনাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

এরপর ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া একই ইউনিয়নের সুন্দরবনসংলগ্ন শিকারী বাড়ি গ্রামে যান। সেখানে ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফের সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে করা বিভিন্ন কার্যক্রম দেখেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হয়েও লড়াই করে যাওয়া স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং স্থানীয় মানুষের লড়াইয়ের কথা শোনেন ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া। শিকারী বাড়ি গ্রামের জোসনা খাতুন, কাকুলি আক্তার, হালিমা বেগম ও আকলিমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া। তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তাঁকে বিস্মিত করে। এ সময় স্থানীয় এক নারী নিজেদের পুকুরে জাল ফেলে রাজকন্যাকে মাছ ধরে দেখান। রাজকন্যা বেশ কিছুটা সময় তাঁদের সঙ্গে কাটান, তাঁদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। এরপর তিনি কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিদর্শন করেন। তিনি কয়রা উপজেলা সদরের মদিনাবাদ পোস্ট অফিসের স্মার্ট পোস্ট সেন্টারের উদ্বোধন করেন।

এই সফরে প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের পুরো উপকূলজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব দৃশ্যমান। এখানে প্রতিবছর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হয়। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কীভাবে মোকাবিলা করছি, সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া তা দেখার জন্য এখানে এসেছেন। এখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন।’ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তাঁকে মুগ্ধ করেছে।

সকালে কয়রায় সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়াকে স্বাগত জানান খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান, খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান ও কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিএম তারিক-উজ-জামান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে কয়রা ছাড়েন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo