যশোর শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় দুর্বৃত্ত্বদের ছুরিকাঘাতে সোলায়মান (৩০) নামে এক যুবক খুন হয়েছে। ঘটনার সময় জসিম সিকদার (২৮) নামে আরো এক যুবক ছুরিকাঘাতে জখম হয়েছেন। এঘটনায় পুলিশ এক সন্দিগ্ধকে আটক করেছে।
যশোর শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় দুর্বৃত্ত্বদের ছুরিকাঘাতে সোলায়মান (৩০) নামে এক যুবক খুন হয়েছে। ঘটনার সময় জসিম সিকদার (২৮) নামে আরো এক যুবক ছুরিকাঘাতে জখম হয়েছেন। এঘটনায় পুলিশ এক সন্দিগ্ধকে আটক করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার পিযুষের চায়ের দোকানের সামনে। নিহত সোলায়মান ওই এলাকার আব্দুল হকের ছেলে। আর আহত জসিম একই এলাকার নজরুল সিকদারের ছেলে। তিন সন্তানের জনক সোলায়মান জেস ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসে চাকরি করতেন।আহত জসিম জানিয়েছেন, তিনি শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তার ফুফু শিউলী বেগমকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পিযুষের চায়ের দোকানের সামনে পৌছালে চাঁচড়া এলাকার নিয়ামতের ছেলে আরাফাত, যশোর মেডিকেল কলেজের পেছনের মেহেদী হাসান ও মনিরুলের ছেলে জনি এসে টাকা দাবি করে। তারা মূলত মাদক সেবী। মাদক সেবনের জন্য টাকা চাইলে তিনি দিতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর চড়াও হয়। সে সময় তার ফুফু শিউলী ঠেকাতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর তাকে ছুরিকাঘাত করে। সে সময় পাশেই ছিলেন সোলায়মান। তিনি ঠেকাতে গেলে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। ছুরির আঘাত তার বুকে লাগে। সাথে সাথে তিনি মাটিতে পড়ে যান। হামলাকারীদের মধ্যে টিবি ক্লিনিক এলাকার শরিফুল ও সিরাজুল ইসলাম নামে আরো দুইজন ছিলো। সাথে ছিলো অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জন। ঘটনার পরই তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে আশেপাশের লোকজন সোলায়মানকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাসিব মো. আলী হাসান তাকে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে মৃত ঘোষণ করেন। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যান।
নিহতের শ্যালক মোহাম্মদ আলো জানিয়েছেন, ওই এলাকায় নিয়মিত মাদক সেবন করে সন্ত্রাসীরা। সোলায়মান এই মাদক সেবনের প্রতিবাদ করে। তারই জের ধরে এলাকার সুজন ও শরিফুলের সাথে বিরোধ বাধে। তারাই মূলত ইন্ধন দিয়ে সোলায়মানকে খুন করিয়েছে।নিহতের পিতা আব্দুল হক জানিয়েছেন, তিনি দিনমজুর। তার ছেলে সোলায়মান রেল রোডস্থ সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার সামনের একটি জেস ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসে চাকরি করেন। এলাকার তার অনেক সুনাম রয়েছে। সন্ত্রাসীদের মাদক সেবন ও কেনাবেচায় নিষেধ করায় তাকে খুন করা হলো। নিহত সোলায়মানের স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে আছে। তারা এতিম হয়ে গেলো।
এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকাটি মাদক বিক্রেতা ও সেবীদের স্বর্গরাজ্য। দিনের বেলায় তো বটেই। সন্ধ্যা নামতেই সেখানে চলে মাদকসেবীদের হাট। ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সহজলভ্যতা রয়েছে ওই এলাকায়। কোতয়ালি থানা, চাঁচড়া ফাঁড়ির পুলিশ ওই সব এলাকায় নিয়মিত টহল দিয়ে থাকে। অভিযানও পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু সে অভিযোগ বা টহল লোক দেখানো মাত্র।
সূত্রটি জানিয়েছে, নিহত সোলায়মানের সাথে আহত জসিম পেশায় রিকসা চালক হলেও সে মূলত পুলিশের সোর্স। মাদক বিক্রেতাদের ধরিয়ে দেয়া বা মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ২৪ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে ওই এলাকা থেকে পুলিশ শহিদুল ও শাহীন নামে দুইজনকে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে। তাদের বাড়িতে তল্লাশি করে শহিদুলের ঘর থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কোতয়ালি থানার একজন সহকারী উপপরির্দশক। মাদকসহ শহিদুল ও শাহীনকে ধরিয়ে দেয়ার পেছনে সোর্স জসিমের হাত থাকতে পারে। এছাড়া পুলিশের কাছ থেকে টাকাও পেতে পারে জসিম। ওই টাকার বিষয়টি জানতে পারে মূলত আরাফাত ও মেহেদী হাসান। ওই টাকার ভাগ নিতে তারা জসিমের কাছে যায় শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে। টাকা না দেয়ায় জসিমের ওপর আক্রমন হয়। সে সময় পাশেই সোলায়মান প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়। পুলিশ যদি বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে তদন্ত করে তাহলে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারবে বলে এলাকার একটি সূত্র দাবি করেছে।ঘটনার পর যশোর জেনারেল হাসপাতালে যান যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল জুয়েল ইমরান, কোতয়ালি থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাকসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।
জুয়েল ইমরান জানিয়েছেন, ছুরিকাঘাতে সোলায়মান হোসেন নামে একজন মারা গেছেন। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে পারিবারিক কোন বিষয় নিয়ে গন্ডগোল থাকতে পারে। এছাড়া মাদকের বিষয়টি উঠে এসেছে। সব ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। আর আসামি আটকের অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি আব্দুর রাজ্জাক।