ভোলার সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা

শরীফ হোসাইন প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর , ২০২৩ ০৭:৫৮ আপডেট: ২৫ অক্টোবর , ২০২৩ ০৭:৫৮ এএম
ভোলার সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা
ঘূর্ণিঝড় হামুনে’র মোকাবেলায় ভোলায় ৭৪৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপতরের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকালে ভোলার উপকূলে এর প্রভাব পড়ার কথা থাকলেও তা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বুধবার সকালে হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদগণ।

ঘূর্ণিঝড় হামুনে’র মোকাবেলায় ভোলায় ৭৪৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপতরের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকালে ভোলার উপকূলে এর প্রভাব পড়ার কথা থাকলেও তা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বুধবার সকালে হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদগণ। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনে’র মোকাবেলায় এবং এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলা জেলা প্রশাসন।

এ দিকে ঘূর্ণিঝড় হানুম’র মোকাবিলায় জেলার ৭ উপজেলায় ১৩ হাজার ৬শ’ ৬০ জন সিপিপি সদস্য প্রস্তুত রয়েছেন। এরইমধ্যে তারা মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করেছেন। অন্যদিকে ভোলার সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডবিউটিএ কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার জন্য ৮টি কন্ট্রোল রুম, ৯২টি মেডিকেল টিম ও ৭৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সচেতন  করা হচ্ছে।  মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ভোলা জেলা  প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভোলা জেলা প্রশাসক মো: আরিফুজ্জামান। জেলা প্রশাসক মো: আরিফুজ্জামান বলেন, ভোলায় এখনও ঘূর্ণিঝড় হামুন’র প্রভাব পড়েনি। এরপরেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

ইতোমধ্যে ৭৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। উপজেলা পর্যায়ের আমাদের কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি না নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি ৯২টি মেডিক্যাল টিম থাকবে। এছাড়া দুর্যোগকালীন ত্রাণ তহবিলে শিশু খাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা ও গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে আসা মানুষের জন্য ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদা ইতোমধ্যে দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালে পাঠানো হয়েছে। একটি জরুরী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হবে। সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্যোগকালীন সময়ে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণি রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস, সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্ট সহ ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে। এছাড়া উপক‚লীয় অঞ্চলের প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে দুর্গম অঞ্চলে যে সকল মানুষ রয়েছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য নির্দেশনার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সরে জমিনে কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে নদীতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান থাকায় নদীতে মাছধরা থেকে সকল জেলে বিরত থাকলেও জেলেদের ব্যবহারিক ট্রলারগুলো দিয়ে এরই মধ্যে উপক‚ল অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহিদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তামীম আল ইয়ামিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলামসহ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং ভোলার সকল প্রিন্ট এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। অন্যদিক ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত থাকায় ভোলা থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে ভোলার বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী পরিচালক মো: শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সকাল থেকে ভোলায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হওয়ায় ৭ উপজেলার (ভোলা-ঢাকা, ভোলার বোরহানউদ্দিন-ঢাকা, চরফ্যাশন-ঢাকা, লালমোহন-ঢাকা, মনপুরা-ঢাকা, ভোলা- লক্ষীপুর, দৌলতখান-আলেকজান্ডার) সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এটি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এদিকে ভোলার সকল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পরেছে সাধারণ যাত্রীরা। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে ভোলায় সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। এছাড়া  সকালের দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও দুপুর থেকে আর কোন বৃষ্টির দেখা মেলেনি।

এ দিকে ভোলার সকল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও দুপুর ৩টায় ইলিশাঘাট থেকে ছেড়ে গেছে কার্নিভাল ক্রজ। ভোলার ব্রাদার্স নেভিগেশন কোং এর ভোলা অফিসের সহকারী ম্যানেজার বাপ্পী জানান, আমরা নির্দেশনা মেনে সকল লঞ্চ বন্ধ রেখেছি এবং কার্নিভাল ক্রুজ যেটা করেছে এটা অবৈধ। ঢাকাগামী অনেক যাত্রীরা ইলিশাঘাট থেকে ফিরে গিয়েছে বাসা-বাড়ীতে। তবে দূর্যোগের মধ্যে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখায় তারাও সাধুবাদ জানিয়েছে। নয়ন হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। আগে জীবন, পরে চাকুরী।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo