ভোলায় "রাসেল ভাইপার" আতঙ্ক

শরীফ হোসাইন প্রকাশিত: ২০ জুন , ২০২৪ ০৮:৫২ আপডেট: ২০ জুন , ২০২৪ ০৮:৫২ এএম
ভোলায় "রাসেল ভাইপার" আতঙ্ক
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে জালু মাঝির বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখেন ঘরের লোকজন। পরে ঘরের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ করে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারকে বের হতে দেখেন। এই দৃশ্য দেখে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে বাড়ির লোকজন এসে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। পরে জানতে পারেন সাপটি বিষধর রাসেল ভাইপার।

ভোলায় গত ৪ দিনে ৩টি রাসেল ভাইপার সাপ ধরা পড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর প্রকাশ্যে দেখা মিলছে এই রাসেল ভাইপারের। বিষধর এই সাপ সম্পর্কে গ্রামগঞ্জের মানুষের মধ্যে ধরনা বা পরিচিতি একেবারেই নেই বললেই চলে। ইতোপূর্বে ভোলায় দু-একটি ধরা পড়লেও তা অবমুক্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভোলা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধরা পড়ছে রাসেল ভাইপার।

গত রোববার (১৬ জুন) ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সৈয়দাবাদ এলাকার হেমায়েত মাওলানা বাড়ির সাখাওয়াত হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাথরুমে সাপটির দেখা মেলে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যদিও আতঙ্কিত হয়ে সাপটিকে তাৎক্ষণিক পিটিয়ে মেরে ফেলেন লোকজন। 

এর দুইদিন পর মঙ্গলবার (১৮ জুন) ভোলা সদরের পূর্ব ইলিশায় এক বসত বাড়ির পাশের রাস্তায় দেখা মেলে বিষধর এ সাপটিকে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় সাপটি।

এদিকে একই দিনে দৌলতখান উপজেলায় বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারের কামড়ে ৩টি বিড়ালের মৃত্যু হয়েছে। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন। বিড়াল তিনটিকেও নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জালু মাঝির বসত ঘরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে জালু মাঝির বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখেন ঘরের লোকজন। পরে ঘরের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ করে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারকে বের হতে দেখেন। এই দৃশ্য দেখে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে বাড়ির লোকজন এসে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। পরে জানতে পারেন সাপটি বিষধর রাসেল ভাইপার।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন থেকে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বন বিভাগকে খবর দিলে তারা সাপটি উদ্ধার করে তজুমদ্দি উপজেলার শশিগঞ্জ বিটের গহীন অরণ্যে অবমুক্ত করেন। এ নিয়ে দৌলতখান উপজেলায় দুটি রাসেল ভাইপার সাপের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

এ বিষয়ে ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই আসে। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো ওই সাপটি লোকালয়ে চলে আসতে পারে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া কেউ এসব সাপ দেখলে মেরে না ফেলে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানোর অনুরোধ করেন।

তথ্য অনুযায়ী উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতেই এ সাপের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। এ প্রজাতির সাপের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। তবে বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় এ প্রজাতির সাপের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। উত্তরবঙ্গে রাসেল ভাইপার সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে পরিচিত।

সাপটির গাঁয়ের রং এবং চিত্রাকৃতির হওয়ায় ভোলার বেশিরভাগ মানুষ এটিকে নদীতে বাস করা অথবা অজগরের ছদ্মনাম বলেই জানে। বাংলাদেশে যে সব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ।

আফ্রিকা উপমহাদেশ থেকে আসা এ বিষধর সাপের উপদ্রব এখনই কমানো না গেলে পরে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo