কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদ ও কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রাক্তন ছাত্র পর্ষদ (কেএমও ছাত্র পরিষদ) এর আয়োজনে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় জাগরণে আত্মোৎসর্গকারী মহাপুরুষ মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ৭৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে
কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদ ও কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রাক্তন ছাত্র পর্ষদ (কেএমও ছাত্র পরিষদ) এর আয়োজনে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় জাগরণে আত্মোৎসর্গকারী মহাপুরুষ মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ৭৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।ভারতের খ্যাতিমান মনিষী মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫–১৯৫০) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তিনি ইসলামি চিন্তাবিদ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও সাংবাদিক ছিলেন। চেরাগি পাহাড় মোমিন রোড়ে, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠাতা। ধর্মচর্চা, শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার পরিমণ্ডলে তিনি অপরিসীম অবদান রেখে গেছেন। বাংলার মুসলমানদের মাঝে আত্মজাগরণের প্রেরণা ছড়িয়ে দেন এবং শিক্ষা–সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের অগ্রসর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন মুসলিম জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম দরদি রাহবার বা পথিকৃৎ।২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে, এতিমখানা পরিচালনা পরিষদের সহ সভাপতি লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন’র সভাপতিত্বে সম্পন্ন হয়েছে।সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি’র প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান। সদ্যপ্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানকে উৎসর্গ করে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষা প্রসার ও সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য পূর্ব বাংলার প্রথম মুসলিম চিকিৎসক ডা. এম.এ. হাসেমকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। কদম মোবারক প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের মঈনুল ইসলাম ও মো কায়ছার হামিদ’র সঞ্চালনায় সভায় অতিথি আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ’র অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. শামসুদ্দিন শিশির, ইসলামাবাদীর দৌহিত্র এএমএস ইসলামাবাদী গাজী, প্রিন্সিপাল ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, আলাউদ্দিন আলী নূর, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি খান, ইতিহাস গবেষক সোহেল মোঃ ফখরুদ্দীন, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, মোতোয়াল্লি আজাদ উল্লাহ খান, কদম মোবারক এম.ওয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জহুর, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ ইলিয়াছ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াছ, অর্থ সম্পাদক আবদুল আলিম, মোঃ নবাব মিয়া, মোঃ আরিফ, হাফেজ মিজানুর রহমান প্রমুখ।প্রধান অতিথি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, উপমহাদেশে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এক আলোকবর্তিকার নাম তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বি শেষে মানুষের জন্য আত্ম উন্নয়ন এর জন্য কাজ করে গেছেন।সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য মাদ্রাসা,অনাথ শিশুদের জন্য এতিমখানা সহ বিভিন্ন সমাজ কল্যাণ মূলক কাজে তিনি অবদান রেখেছেন।তিনি একক কোন ব্যাক্তিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি একটি বৈষম্যহীন সমাজের চিত্রকার ছিলেন।প্রফেসর সিকান্দার বলেন, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী মানুষের আত্ম মুক্তির জন্য তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন। তার ভাবনা চিন্তায় ছিলো মানুষের জাগতিক পরিবর্তন ও আত্মিক উন্নয়ন।তার ইচ্ছে ছিলো আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।তিনি বলেন, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী আজীবন মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল এতিমদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যিনি আজীবন মানবতার কল্যাণে রাজনীতি ও সমাজসেবা করে গেছেন। একজন গুণী মনিষী হিসেবে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী অনেক প্রতিভাসম্পন্ন দূরদর্শী নেতা ছিলেন।স্মরণসভায় প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান আরো বলে, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর জীবনাদর্শ ও বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী আজীবন জনহিতকর, জাতীয় উন্নতিমূলক বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞে নিবেদিত ছিলেন। বিপ্লবী এই কীর্তিমান বাংলার মুসলিম সমাজের জাগরনে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, প্রাদেশিক সংসদে তিনি বাংলায় বক্তৃতা ও বিতর্ক সম্পাদন করতেন। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে এটি উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করে। তিনি তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে কুপ্রথামুক্ত ও সময়োপযোগী করে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী করে তুলতে অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানের পাশাপাশি মাদ্রাসা এবং এতিমখানাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনক ছিলেন তিনি। বাল্যবিবাহ ও নারী-নির্যাতন রোধ, সমাজের কু-সংস্কার নিরসন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে আজীবন উদগ্রীব ছিলেন এই মহান ব্যক্তিত্ব।সভাপতি লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন বলেন, তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের সমাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, ইতিহাস এবং আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞানে যুগোত্তীর্ণ শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এতদ্ঞ্চলে জাতীয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা ও সংলগ্ন শিক্ষা কমপ্লেক্স তাঁর অন্যতম কীর্তি। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ রদ ও খিলাফত আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সময় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন ও কৃষক প্রজা আন্দোলনের পরিচালক ছিলেন।মোরশেদ হোসেন আরো বলেন, প্রখ্যাত আলেম হওয়া সত্বেও তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না বরং যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক ও সমাজনিবিষ্ট জনসেবক ছিলেন। একটি শিক্ষিত, জ্ঞাননির্ভর ও উদারপন্থী জাতি প্রতিষ্ঠায় তাঁর সারাজীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুসরণীয় হয়ে আছে।উল্লেখ্য, বাদে ফজর খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, মুনাজাত, কবর জিয়ারত ও বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠান এর পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ, হিফজ সমাপ্তকারীদের পাগড়ি প্রদান, আলোচনা সভা ও তাবারুক বিতরন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি হয়।