প্রজনন মৌসুমের একদম শুরুতে যশোর পৌরসভা এবারও নিধনে না নামায় মশার বংশ বিস্তার বহুগুন বেড়ে গেছে। রক্তচোষক ক্ষুদ্র এই পতঙ্গটির ঘনত্ব এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে দিনে রাতে উৎপাত সমান। পৌরসভা সম্প্রতি নিধন অভিযান চালালেও শহরে মশার উপদ্রব কমে নি, উল্টো বেড়েছে। দেরিতে নিধনে নামায় ড্রেন, ডোবা-খানাসহ অন্যান্য প্রজনন ক্ষেত্রে মশার যেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে মানুষের বাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক পৌর কর্মকর্তা জানান জহিরুল ইসলাম চাকলাদার মেয়র থাকাকালীন মশা নিধনে আকিক নামে একটি কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। সেই ঔষুধে মশা মরতো।
প্রজনন মৌসুমের একদম শুরুতে যশোর পৌরসভা এবারও নিধনে না নামায় মশার বংশ বিস্তার বহুগুন বেড়ে গেছে। রক্তচোষক ক্ষুদ্র এই পতঙ্গটির ঘনত্ব এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে দিনে রাতে উৎপাত সমান। পৌরসভা সম্প্রতি নিধন অভিযান চালালেও শহরে মশার উপদ্রব কমে নি, উল্টো বেড়েছে। দেরিতে নিধনে নামায় ড্রেন, ডোবা-খানাসহ অন্যান্য প্রজনন ক্ষেত্রে মশার যেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে মানুষের বাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক পৌর কর্মকর্তা জানান জহিরুল ইসলাম চাকলাদার মেয়র থাকাকালীন মশা নিধনে আকিক নামে একটি কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। সেই ঔষুধে মশা মরতো।
কিন্তু বর্তমানের ব্যবহৃত ঔষুদ মশা মারার জন্য কার্যকর হচ্ছে না। এবার শীতের শেষে ও বসন্তের শুরুতে যশোরে বৃষ্টিপাত হয়। শীত বিদায় নেয়ায় তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করে। এমন আবহাওয়ায় মরানদ ভৈরব’ ভর্তি কচুরিপানার জঙ্গল, পানির প্রবাহ বিহীন
ময়লায় ঠাসা ড্রেনসহ নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ না হওয়া ডাস্টবিনে মশার অবাধ বংশ বিস্তার করছে। যশোর সিভিলি সার্জন অফিসের জেলা কীটতত্ত্ববিদ আমিনুল হক জানান, কোন ধরণের মশা নিধন করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্ধারণ করতে হবে। এক প্রজাতির মশা নিধনে অন্য প্রজাতির ওপর প্রয়োগযোগ্য ওষুধ ব্যবহার করা সঠিক না। তাছাড়াও মশার ঘনত্ব পরিমাপ করে ওষুধের মারণমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। তাদের
দপ্তরের মশার ঘনত্ব পরিমাপের সক্ষমতা রয়েছে।
ঘনত্ব মেপে মশার ওষুধের মারণমাত্রা নির্ধারণ করতে পারেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো পরামর্শ নেন না। মশক নিধন অভিযানে কোনে সমন্বয় কখনো পৌরসভা করে না। যার কারণে মশক নিধন অভিযান অনেক ক্ষেত্রে সেভাবে ফলপ্রসূ হয় না।তিনি বলেন, এক ধরণের মশা নিধনে আরেক রকমের মশা মারা ওষুধ কার্যকর নয়। মশা মারার জন্য সুনির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। সঠিক মারণমাত্রা নির্ধারণ করে মশা নিধনে নামলে সেটি কার্যকর হবে। পৌরবাসির অভিযোগ, পৌরসভা থেকে নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করার কারনেই মশার উপদ্রোব বেড়ে গেছে। দিনে ও রাতে সময় সময় কানের পাশে গুনগুন করে বেড়ায় আর কামড়া”েছ। মানুষ কাজ শেষে করে বাড়িতে ফিরে শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারছে না। মশার হাত থেকে সব সময় মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বলছিলেন সৃজনশীল বই প্রকাশনী ঐতিহ্যের যশোর আউটলেট নির্বাচিত’র ব্যব¯’াপক শেখ মাঈনউদ্দীন রিংকু সঙ্গে করে নিয়ে দেখালেন পৌরসভার ড্রেনের দশা। আর্বজনায় ভর্তি ড্রেনে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ¯ি’র জমে থাকা পানিতে মশা আর মশা। পাশাপাশি দেখা মিলল মশার শুককীটও (লার্ভা)। সেগুলোর পরিমাণও প্রচুর। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহসীন উদ্দিন মনে করেন, মশক নিধনের সময় কীটনাশকের সঠিক ‘ল্যাথাল ডোজ’ বা মারণ মাত্রার প্রয়োগ হয় না। এতে মশা না মরে উল্টো কীটনাশকরেজিসটেন্স’ (সহনশীল) হয়ে যায়। নিধন কার্যক্রমের আগে ও পরে মশার ঘনত্ব পরিমাপ করে দেখা দরকার। তাহলে মশা মারায় ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা ও সঠিক মাত্রাও নির্ধারণ করা যাবে। এ ছাড়া চারপাশে লার্ভিসাইড (শুককীট) নাকি আডাল্টিসাইড (পূর্ণবয়স্ক) বেশি সেটি লক্ষ্য রেখে ওষুধ দিতে হবে। কারণ, দুটি ধরণের জন্য ওষুধ ও মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন।
যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু জানান, মশার ঘনত্ব পরিমাপের সক্ষমতা তাদের প্রতিষ্ঠানের নেই। ওষুধের বোতলের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করেন। মশার লার্ভা নষ্ট করার জন্য ভারতীয় ডাবল ওষধু স্প্রেমেশিন দিয়ে স্প্রেকরা হয়। আর উড়ন্ত মশা মারার জন্য সিঙ্গাপুরের এগ্রোমাইথিন ঔষুধ ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মশা নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ৮ দিন ধরে ৮টি ওয়ার্ডে মশা নিধন কার্যক্রম করা হয়।অভিযোগ উঠেছে পৌরসভা থেকে মশা নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হলেও সঠিক ভাবে এটা না করার কারনে মশা না মরে বংশ বিস্তার করেছে।আজিজুল হক নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, রাতের বেলা মশারা শুধু হুল ফোটায় ব্যাপারটি তেমন নয়। দিনের বেলায়ও কামড়ায়। যশোরের অব¯’া যেন ইশ্বর গুপ্তের সেই ব্যঙ্গ কবিতার মতোÑ ‘দিনে মাছি রাতে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি’। তিনি বলেন, রাতে মশা দিনেও মশা, যশোরবাসীর মরণদশা। যশোর শহরের এখনকার এক নাগরিক দুর্ভোগের নাম হলো মশা। মশায় নাকাল যশোরবাসী। বাড়ির বাইরে রাস্তাঘাটেও মশারা হুল বসায়। ফগার মেশিনের ধোয়ায় মশারা উড়ে আরেক এলাকায় চলে যায়। সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাফর ইকবাল বলেন, তাদের ছাত্রাবাসে দিনের বেলাতেও মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। কিš‘ তাতে তেমন একটা কাজ হয় না। সেজন্য সবসময় দড়িতে মশারি টাঙিয়ে রাখেন। দুপুরে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমান। তিনি বলেন, কয়েলে কোন কাজ হয় না। তাই এই ব্যবস্থা তার মতন অন্যরাও এমনটি করেন। যশোর পৌরপার্কে প্রতিদিন হাঁটতে আসেন স্কুল শিক্ষক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, হাঁটার সময়ও মশা কামড়ায়। হাঁটা শেষ করে পার্কের বেঞ্চিতে যখন বসি মনে হয় মশারা উড়িয়ে নিয়ে যাবে। পার্কের দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলার সময় হুমায়ূন কবীর, আবিদুর রহমানসহ আরো কয়েকজন জানান- পার্কের কোথাও শান্তিতে একদন্ড বসবে কেউ তার উপায় নেই। দলবেধে এসে কামড়াতে থাকে মশা। জনউদ্যোগ যশোরের আহবায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ মনে করেন শহরের ময়লা ঠিক মত অপসারণ হচ্ছে না। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার হয় না।
ফলে সেখানে মশার আস্তানা গড়ে উঠছে। ট্যাক্স দিয়েও এরকম নাগরিক দুর্ভোগ পোহাতে হ”েছ। যশোর শহরের লালদিঘির পাড়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রাদার টিটো’স হোম-এর পরিচালক ব্রাদার টিটো জানান, মশার উপদ্রব এখন ভয়ঙ্কর। নিজ উদ্যোগে চারপাশ পরিষ্কার করার পাশাপাশি কীটনাশক ছিটিয়ে উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। তিনি মনে করেন, পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মশক নিধনে অভিযানে নামা। তাহলে এটি অনেক ফলপ্রসূ হবে। শহরের চেকপোস্ট এলাকার চায়ের দোকানি মিজানুর রহমানবলেন,চারপাশে মশা আর মশা। বিকেলের শেষভাগে উপদ্রব বাড়তে থাকে। রাত হলে চরম উৎপাত শুরু হয়। শুধু রাতে নয় দিনের বেলাতেও মশা কামড়ায় বলে দোকানে গ্লোব (মশার কয়েল) জ্বালিয়ে রাখি। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগটির প্রধান মদন কুমার সাহা জানান, এখন গরমের শুরু। আর এই সময়টাতে মশার প্রজনন আরম্ভ হয়। তাই এখনই মশক নিধনের কার্যকর ও উপযুক্ত সময়। এই সময়টাতে নিধন চালানো গেলে বছরভর উপদ্রব কম থাকবে।তিনি আরো জানান, মশা মারতে ওষুধ ছিটানোর ক্ষেত্রে মারণমাত্রা ঠিক রাখতে হবে। এটি ঠিক না হলে মশা মরে না। উল্টো, একসময় কীটনাশক ও মশক নিধনের বিষ মশারা ‘রেজিটেন্স’ (সহনশীল) হয়ে যায়। তখন ওষুধ ছিটালে মশা মরে না। এ ছাড়া মারণমাত্রা অনেক বেশি হলে পুকুর, ডোবা ও নালায় ব্যাঙ, মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি মারা যেতে পারে। এতে ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এ ছাড়া মশা মারার নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। সেগুলো প্রয়োগ করে নিধন চালাতে হবে। ফসলের পোকামাকড় দমনের ওষুধ মশক নিধনে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর না।যশোর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জায়েদ হোসেন জানান, ভারতীয় ডাবল ও এগ্রোমাইথিন ঔষুধ ব্যবহার করা হয়। প্রতিনিয়িত মশা নির্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শতভাগ মশা মরবে না। তারপর মশা নির্ধন করে পৌরবাসিকে শান্তিতে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।