স্থায়ী কোন বাস টার্মিনাল না থাকায় দক্ষিণ জেলার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ শাহ আমানত সেতুর বশিরুজ্জামান চত্বরে গড়ে উঠেছে অঘোষিত বাস
টার্মিনাল।এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লোকাল ও দূরপাল্লার বাস গুলো সেতুতে প্রবেশের মুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে সৃষ্টি হয়
দীর্ঘ যানজট।
চট্টগ্রাম নগরীতে এরকম অবৈধ অন্ততঃ ২০টিরও বেশি অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ড রয়েছে ফলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এ বিষয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান আন্তরিকতা ও সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার অভাবে এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন (পূর্বাঞ্চল) সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস ও দেওয়া হয়েছে। টার্মিনাল এলাকায সংস্কার কাজের জন্য এনে কংক্রিট জমা করা হলেও অদ্যাবধি কাজ শুরুর কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। ওরা একে অপরের কথা বলে। সিডিএ করবে কখনো বলে সিটি কর্পোরেশন করবে। প্রতিদিন ৬ হাজারেরও অধিক বেশি আন্ত:জেলা বাস ,ট্রাক,ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে।
কিন্তু স্থায়ী বাস টার্মিনাল আছে মাত্র দুইটি, আর ট্রাক টার্মিনাল একটি। বৈধ টার্মিনাল গুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে সড়কের
অঘোষিত বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করাতে হয়। স্থায়ী বাস টার্মিনাল দুটি বহদ্দারহাট ও কদমতলী এলাকায়। স্থায়ী ট্রাক টার্মিনালটি
হচ্ছে নগরের নিমতলায়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার গরীবুল্লাহ শাহ (রহ:) মাজার সংলগ্ন সড়ক মোড়, মুরাদপুর,অক্সিজেন মোড়, নতুন চান্দগাঁও থানার সন্মুখ সড়ক,শাহ আমানত সেতু,(কর্ণফুলী ব্রিজ) কদমতলী বিআরটিসি'র বাস স্টেশন থেকে স্টেশন রোড, মাদারবাড়ি, অলংকার মোড় থেকে এ কে খান গেইট ও আগ্রাবাদ বড়পুল।
সরেজমিনে চট্টগ্রাম বহাদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায় টার্মিনাল জুড়ে খাদ খন্দক,গর্তে ভরা, বৃষ্টির পানি জমে কদমাক্ত
হয়ে আছে একাধিক বাস কাউন্টারের সন্মুখস্থল। গণশৌচাগার গুলো ব্যবহার অনুপযোগী।নামে মাত্র যাত্রী ছাউনী থাকলে ও নেই কোন সাইনবোর্ড,সকাল থেকে সন্ধ্যা রাতে পর্যন্ত দখলে থাকে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীর মাদকাসক্ত-জুয়ারীদের দখলে।
বান্দরবান ও কক্সবাজার দূরপাল্লার বাসের জন্য অপেক্ষমান একাধিক যাত্রীর সাথে কথা বললে তারা ঢাকা প্রতিদিন প্রতিনিধিকে জানান অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই চট্টগ্রামে প্রতিদিনই শত শত বেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসেন সেই চিন্তা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অন্তত এই আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল টির সংস্কার ও যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরী। একাধিক সূত্রে জানা যায়। সিডিএর নির্মিত বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনালটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গাড়ি রাখার অনুপযোগী হয়ে পরার জন্য একমাত্র সিডিএ কতৃপক্ষ ও লিজ গ্রহীতারাই দায়ী।লিজ গ্রহীতা ও সিডিএ কতৃপক্ষ একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে এই বাস টার্মিনাল টি পরিত্যক্ত অকেজ হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মোঃ মুসা জানান বর্তমানে বাস টার্মিনালে সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে, পুকুর সময় খাদ-খন্দকে গাড়ি পড়ে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সহ নিত্যদিন গাড়ি দুর্ঘটনা পতিত হচ্ছে। টার্মিনাল ইজারা গ্রহীতা পক্ষ নিয়মিত টাকা আদায় করা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক এই বাস টার্মিনালটির অকেজো লাইট পোস্ট সংস্কার করেনি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করেনি। এমনকি দিনে, রাতে নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা হয়নি কোন সিকিউরিটি গার্ড। সন্ধ্যা,রাতে নিরাপত্তাহীন ভাবে চলাফেরা করতে হয় শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীদের।
এদিকে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে
বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।তায় সকল বাস নতুন ব্রিজ এলাকা জুড়ে পার্কিং করার ফলে সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। একই চিঠিতে অলংকার মোড় অথবা সিটি গেট সংলগ্ন সুবিধা জনক স্থানে ঢাকাখমুখী ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আগত বাসের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। নির্মাণাধীন চাক্তাই খালের উপর সংযোগ সেতু এলাকার পূর্ব দক্ষিণাংষে দ্বিতীয় শাহা আমানত সেতুর গোড়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের পরিত্যক্ত জায়গায় দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী নিকটবর্তী উপজেলার বিভিন্ন রুটের বাস, মিনিবাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল সংস্কারসহ ৪ দফা দাবিতে গত বছরের ৮ নভেম্বর দুই ঘন্টা প্রতিকি পরিবহন ধর্মঘট কর্মসূচি ও মানববন্ধন পালন করে আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটি। বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সা: সম্পাদক মোঃ ইউনুছ
(ভারপ্রাপ্ত) জানান এই আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি বছর ২১ লাখ টাকারও অধিক ভাড়া পায় সিডিএ কতৃপক্ষ। কিন্তু দুঃখের বিষয় সিডিএ টাকা নিয়ে গেলেও বছরের পর বছর কোন সংস্কার করেনি। ফলে পুরো বাস টার্মিনালটি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে,বলতে গেলে পরিত্যক্ত। দেয়ালের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। আমাদের চার দফা দাবি পূরণ না হলে আমরা পুনরায় কঠোর আন্দোলনে যাব। আমাদের মুল দাবীর পাশাপাশি অন্য দাবি গুলো হচ্ছে, টার্মিনাল সংযোগ সড়ক অবৈধ দখলদার মুক্ত করা, মাদকসেবী, জুয়ারীদের মূল উৎপাঠন করা,শাহ আমানত সেতু এলাকায় মিনি টার্মিনাল নির্মাণ, প্রশাসন, নামে বেনামে সংগঠনের চাঁদাবাজি বন্ধ করা ও
সড়কে ফিটনেস, লাইসেন্সবিহীন অবৈধ গাড়ি চলাচলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। টার্মিনালের যাত্রী ছাউনি এলাকায় মাদক সেবী ও জুয়ারীদের আড্ডার বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ খাইরুল ইসলাম জানান এই এলাকায় মাদক ও জুয়ার মুল হোতা নাজিমকে আমরা গত কয়েকদিন আগে গ্রেফতার করেছি, নিয়মিত পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে। বিগত সময়ে মলম পার্টি,ব্যাগ টানা পার্টির দৌরাত্ম্যে নেই বললেই চলে। এরপরও সঠিক কোন তথ্য প্রমাণে অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো মাদকসেবী, ছিনতাই কারী,জুয়ারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে।