দৃশ্য ১: রোববার গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে নিজের তৃতীয় ওভার সবে শুরু করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ঠিক সেই সময় মাঠে ঢুকে পড়ে একটি কুকুর। কুকুরটিকে দেখে দর্শকেরা ‘হার্দিক, হার্দিক...’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কুকুরটি কিছুক্ষণের মধ্যে দৌড়ে পান্ডিয়ার কাছাকাছি চলে যায়। কিন্তু তাঁকে দেখেই ঘুরে মাঠ থেকে বেরিয়ে পড়ে। এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে একজন লিখেছেন, ‘কুকুরও হার্দিক পান্ডিয়াকে এড়িয়ে চলে।’
দৃশ্য ২: গতকাল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের টসের আগে টিভিতে হার্দিক পান্ডিয়াকে দেখানো হচ্ছিল। স্টেডিয়ামের বাইরে থাকা দর্শকেরা বড় পর্দায় তাঁকে দেখেতেই জুতা খুলে স্ক্রিন লক্ষ্য করে ছুড়ে মারতে শুরু করেন।
পান্ডিয়ার ওপর মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সমর্থকেরা কেন এত ক্ষুব্ধ, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। পাঁচ-পাঁচটি আইপিএল শিরোপা জেতানোর পরও রোহিত শর্মাকে হুট করে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে মুম্বাই। রোহিতের জায়গায় নতুন অধিনায়ক করা হয় গুজরাট ছেড়ে মুম্বাইয়ে ফেরা পান্ডিয়াকে। এ ঘটনায় পর থেকে এখন পর্যন্ত ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রামে বহু অনুসারী হারিয়েছেন পান্ডিয়া। এবার তো তাঁর নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
পান্ডিয়ার অধিনায়কত্বে এবারের আইপিএলে নিজেদের প্রথম ২ ম্যাচেই হেরেছে মুম্বাই। রোববার গুজরাটের কাছে ৬ রানে আর গত রাতে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রানের ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে ৩১ রানে।
হার দিয়ে আইপিএল শুরু করাকে অনেক আগেই ‘শিল্পে’ রূপ দিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজিটির টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে টানা কয়েক ম্যাচ হারের ‘বদভ্যাস’ যেমন আছে, ঠিক তেমনি নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোরও অনেক উদাহরণ আছে। তাই মুম্বাইয়ের শুরুর হারগুলোকে সাধারণত স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া হয়। অনেককে মজা করে বলতে শোনা গেছে, মুম্বাই আগে আইপিএলের পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে ওঠার চেষ্টা করে; তারপর আসল খেল দেখায়।
কিন্তু এবার প্রথম ম্যাচ হারতেই যেন মুম্বাইয়ের সমর্থকেরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছেন। কাল হায়দরাবাদের কাছে হারের পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পোস্ট আরও বেড়েছে। একজন এমনও লিখেছেন, ‘শুধু রোহিত শর্মা ভালো খেলুক, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এভাবেই হারতে থাকুক।’
পান্ডিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠলেও তাঁর দাবি, মুম্বাই কাল আইপিএল ইতিহাসের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৭৭ রান দেওয়া পরও তাঁর দলের বোলাররা নাকি ভালো বোলিং করেছেন। ইতিমধ্যেই সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হওয়া পান্ডিয়া তাঁর নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস বুঝতে না দিতেই কি না কে জানে, কথাগুলো বলেছেন হাসতে হাসতে। যেন দলের হারে বেশ মজাই পেয়েছেন তিনি!
বিশ্বকাপের মাঝপথে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে চোটে পড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য ছিটকে যান পান্ডিয়া। ফিরেছেন এবারের আইপিএল দিয়েই। কিন্তু পান্ডিয়ার সিদ্ধান্তগুলো দেখলে যে কারওই স্বার্থপর মনে হবে। দলে বিশ্বমানের বোলার যশপ্রীত বুমরা থাকতেও তাঁকে বোলিংয়ে এনেছেন পরে। শুরুর একাদশে ৪ বিদেশি রাখার সুযোগ থাকলেও রেখেছেন ৩ জন। অধিনায়কত্বের ‘ক্ষমতা’ হাতে পেয়ে নিজেই নতুন বল হাতে তুলে নিচ্ছেন। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বেধড়ক মারের শুরুটাও হচ্ছে তাঁকে দিয়ে।
রোববার গুজরাটের বিপক্ষে শুরুতেই বোলিংয়ে এসে দেন ১১ রান। এরপরও কাল দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন। এবারও দেন ১১ রান। হায়দরাবাদের রান উৎসবের সেই যে শুরু, তা চলেছে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। বোলারদের এভাবে মার খেতে দেখেও পান্ডিয়াকে বলার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি, দলের সিনিয়রদের সঙ্গেও তেমন আলোচনা করেননি।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পান্ডিয়াকে ডেকে নেন সঞ্চালক ইয়ান বিশপ। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘টস হেরে এবারও আপনি বোলিং নিয়েছেন। একবারের জন্যও কি মনে হয়েছে, আপনার দলের বোলাররা ২৭৭ রান দিয়ে ফেলবে?’
উত্তরে পান্ডিয়া হাসতে হাসতে বলতে থাকেন, ‘সত্যিই মনে হয়নি। পিচ খুব ভালো। কোনো দল ২৭৭ করে ফেললে আপনি কতটা খারাপ বা ভালো বোলিং করলেন, তাতে কিছু যায়-আসে না। প্রতিপক্ষ যদি এত রান করে ফেলে, তাহলে বুঝতে হবে ওরা দারুণ ব্যাটিং করেছে। পরিস্থিতি কঠিন ছিল, তারপরও ওরা (দলের বোলাররা) ভালোই করেছে। প্রায় ৫০০ রানের (আসলে ৫২৩) ম্যাচ হয়েছে, পিচ ব্যাটারদের সহায়তা করছিল। আমরা হয়তো কিছু জায়গায় এটা-ওটা করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের বোলিং আক্রমণ তেমন অভিজ্ঞ নয়। তাই আজ (গত রাতে) যা দেখলাম, তা ভালোই লেগেছে।’(সূত্র:প্রথম আলো)