ওসমানীনগর উপজেলা প্রতিনিধি ,সিলেট
ওসমানীনগর উপজেলা পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর ডাইক পানি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় কাচা ঘরবাড়ি ধসে পড়তে শুরু করেছে। আঞ্চলিক সড়ক গুলো পানির নিচে থাকায় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের একাধিক পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা কবলিত হয়ে দূর্ভোগে থাকলেও তাদের ভাগ্যে জুটছেনা কোন ত্রাণ সাহায্য। ত্রাণ সাহায্য না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ রয়েছেন দরিদ্র লোকজন। একাধিক বানবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ধনী লোক তাই কোন কিছু পাই না। বন্যা কবলিত হয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। কিন্তু আমার ভাগ্যে কোন সাহায্য জুটেনি।
সিলেটের ওসমানীনগরে অজিত সরকার(৪৭) নামের এক জেলে হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলার বানাইয়া হাওরে মাছ ধরে গিয়ে নিখোঁজ হন অজিত সরকার।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের ওসমানীনগরে কামার পল্লীগুলোতে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা । টুং টাং শব্দে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত তারা। এসব সরঞ্জাম নতুন ভাবে তৈরি এবং পুরনোগুলোতে শান দিতে যেনো দম ফেলার সময় নেই তাদের। তবে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হয় না বলে দাবি কামারদের।
শুক্রবার উপকেলার দয়ামীর ও উমরপুর পশুর হাটগুলোতে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে হাটে আসা ক্রেতারাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। কর্দমাক্ত পানিতে রাখা হয়েছে গরু। ক্রেতাদের হাটে ঘুরতে হচ্ছে কাদা পেরিয়ে। সব মিলে বৃষ্টিতে ম্লান গরুর হাট। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেক ব্যবসায়ী বালুর বস্তা বিছিয়ে তার ওপরে গরু রেখেছেন। অনেকে আবার ভারী পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে গরু রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুখি মানুষ বিশেষ করে ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়ে গেলেও কেউ এদেশের আশ্রয়হীন ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য কোনো চিন্তা করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এসব দুখি মানুষের আশ্রয়ের জন্য ভূমি সহ বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। আর আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আজকে যারা ঘর পাবেন উপকারভোগী আপনারা প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাণভরে দোয়া করবেন।
জানা গেছে,ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের মুতিয়ারগাঁও, হলিমপুর, ভাগলপুর, কলারাইসহ এলাকার অন্যান্য ৭/৮টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের স্বার্থে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্ষুদির খালের ওপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে কাজটি পায় নিজাম এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান। নিজাম এন্টারপ্রাইজ কাজটি নিজে না করে সাব কন্টাক্ট হিসেবে ব্রিজের কাজটি বিক্রি করে দেন জনৈক ইমরান মিন্টু নামের এক ঠিকাদারের কাছে। ইমরান মিন্টু কাজ পাওয়ার পর উক্ত স্থানের পুরোনো ব্রিজ ভেঙে মালামাল বিক্রি করে দেয়ার পর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য একপাশের বেইজের সামান্য অংশের কাজ করে প্রায় এক বছর ফেলে রাখেন। গত এপ্রিল মাসে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ব্রিজ নির্মাণের বিলম্বের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আলোচনা করেন। এরপর দৈনিক সিলেটের ডাকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে আবার জনৈক ঠিকাদার ইমরান মিন্টু ব্রিজের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ব্রিজের মানহীন কাজ ও ত্রুটিপূর্ণ সাটারিং হওয়ায় ব্রিজের গার্ডার নিচ দিকে প্রায় ৬ইঞ্চি দেবে গেলে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্টদের জানান।
সিলেটের ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৃষ্টিনন্দন প্রাতিষ্ঠানিক ভবনগুলো। ২০২৩ সালের শেষদিকে ভবনগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে দিলেও অনুমোদন না মেলায় চালু করা যায়নি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
সিলেটের ওসমানীনগরে গত বছরের বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় ক্ষত সেরে উঠার পূর্বেই আরেকটি বর্ষাকাল প্রায় দ্বার প্রান্তে। গত ১০ বছরে ওসমানীনগরে বিশেষ করে সিলেট-২ আসন(ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) সরকারদলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ সার্বিক দিক দিয়ে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল এই আসনের দুই উপজেলা ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথের লক্ষ লক্ষ মানুষ।