বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে ব্যাংক ঋণের নামে কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার হয়েছে
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে ব্যাংক ঋণের নামে কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার হয়েছে, তা আগেই যেমন প্রকাশ ছিল এখন সেটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, শিল্প জগতে যেসব প্রতিষ্ঠান পরিচিত নয়, সেগুলোও হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে এবং অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে। এরকম প্রতিটি কোম্পানিই এখন ঋণখেলাপি। এসব ছাড়াও সরকারের সময়ে সংসদ অধিবেশনে ব্যাংক খাতে শীর্ষ ৩০ ঋণখেলাপির একটি তালিকা উত্থাপনের কথা থাকলেও তা আর জনসম্মুখে আসেনি। আশ্চর্যের বিষয়, সেই তালিকায় বড়ো বড়ো ঋণখেলাপি কারও নামই অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অন্যায় সুবিধা দেওয়ার কারণে বড়ো ঋণখেলাপিরা আড়ালে থেকে যান। এভাবে একই সুবিধা ব্যবহার করে বড়ো বড়ো ঋণখেলাপি বরাবরই তালিকা থেকে বের হয়ে গেছেন।অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ঋণখেলাপিদের প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অস্থিরতা কমিয়ে ব্যাংকগুলো সচল করা এবং এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরপর ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠিত হলে ঋণখেলাপিদের বিষয়টিও আসবে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তারা আইনের আওতায় আসবেন বলে আমরা মনে করি। আশঙ্কার কথা, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যত দেরি হবে সফলতার সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে পড়বে। বিগত সরকারের সময়ে সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা এখন ক্রমশ প্রকাশমান। সংকট সমাধানে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বিশেষ কমিশন গঠন অথবা বৃহত্তর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত ও বিচারের মাধ্যমের কঠিন শান্তি নিশ্চিতের প্রক্রিয়াও দ্রুত করতে হবে। দেশ থেকে বছরের পর বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি রোধ, সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্থ পাচারের পথগুলো চিহ্নিত করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আশার কথা বাংলাদেশ ব্যাংক-খেলাপি ঋণে জর্জর ব্যাংক খাতে খেলাপিদের 'ঋণমুক্ত' হতে দিতে নতুন নীতিমালা জারি করেছে। যেখানে ঋণখেলাপিদের নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে।কীভাবে, কোন কোন মাধ্যম দিয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দরকার সেই ফাঁকগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। সকলের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। দেশের অর্থনীতি আবারও সচল করতে সময়পোযোগী দ্রুত ও কঠোর হতে হবে।