ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান, অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে

মোঃ রাসেল হোসেন প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর , ২০২৪ ১২:৩৫ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর , ২০২৪ ১২:৩৫ পিএম
ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান, অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ঠ প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে এ সরকার মাঝে মাঝে অসহায় বোধ করছে। তাদের এই ছোট ছোট ঝড়যন্ত্র এক সময় মহা বিপদ ডেকে আনবে। তাই এদের অপসারণ করতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পরিবর্তন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর আমরা বলতে চাই তাদের যে মুল দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ঠ প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে এ সরকার মাঝে মাঝে অসহায় বোধ করছে। তাদের এই ছোট ছোট ঝড়যন্ত্র এক সময় মহা বিপদ ডেকে আনবে। তাই এদের অপসারণ করতে হবে।

তারেক রহমান আরও বলেছেন, জনগন দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গনতন্ত্র ও দেশে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে এখানে একটি কিন্তু রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরকেই নিতে হবে। স্বৈরাচার পতনের এই মহা সময়ে দেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা, কৃষক, শ্রমিক ও সর্বস্তরের মানুষের অবদানকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই, তাহলে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনার গুম, খুন, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার জনতার অবদানকে যদি স্বীকৃতি দিতে না পারি, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তারেক রহমান শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরে ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে ঢাকায় নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিরাট ভার্চুয়ালি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দানকালে এ কথা বলেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকায় নিহত সাব্বির ও রাকিব হোসেন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারর দাবিতে শহরের পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা ও মুন্সি কামাল আজাদ পাননু সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

তারেক রহমান আরো বলেন, আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি যেখানে কারো কোন ভয় নেই। সকলে আমরা শংকামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলছে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সাথে আমরা অন্যের কথা শোনবার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারতো না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীন ভাবে বলতে পারতাম না। বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। কি ভাবে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল।

ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিষ্ট সরকার পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগষ্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগনের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগনের বুকের উপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগরে দাবী ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শুন্যতা পুরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।

গত ১৬ বছরে বিশেষ গত এই জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মেও জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহীদদের, ৭১ এর শহীদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে।

আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সকলকিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

পরিশেষে তারেক রহমান দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, আসুন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পুরনে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই। তারেক রহমান বিকাল ৪:৪০ মিনিটের দিকে ভার্চুয়াল সমাবেশে যুক্ত হয়ে ১১ মিনিট বক্তব্য রাখেন। বিগত ১৬ বছর পর আয়োজিত বিএনপি’র এই সমাবেশটি গনবিস্ফোরণে রুপ নেয়।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo