দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে সমতলে চা চাষ একসময় প্রবল সম্ভাবনার সৃষ্টি করলেও বর্তমানে নানা জটিলতায় হুমকির মুখে পড়েছে এ শিল্প। চা চাষীদের অভিযোগ নানা টাল বাহানা করে ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করছেনা ফ্যাক্টরিগুলো।
চা পাতা ক্রয়ে অনেক সময় কেটে নেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে লাভ দুরের কথা উৎপাদন ব্যায় মেটাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেকে আবার হতাশা থেকে নিচ্ছেন চা বাগান উপড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, অকশন বাজারে পাওয়া যাচ্ছেনা ক্রেতা। অবিক্রিত হয়ে পড়ে আছে বিপুল পরিমান তৈরিকৃত চা। ফলে চাষীদের ঠিকমত মূল্য দিতে পারছেন না তারা।
তবে, সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রকৃিয়াকরনের প্রতিটি ধাপে চা চাষী ও ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষকে গুনগতমান নিশ্চিত এবং সবাইকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন স্থানীয় চা বোর্ড।সমতলের চা শিল্পের অপার সম্ভাবনা দেখে ব্যাপক চা চাষে ঝুঁকে পড়েন দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড় সহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় চাষীরা। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে ছোট বড় প্রায় ৮ হাজার চা বাগান ও ২৮ টি চা ফ্যাক্টরী।
এসব বাগান ও ফ্যাক্টরী গড়ে ওঠায় ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে এ অঞ্চলের একটি বড় জনগোষ্ঠীর। সৃষ্টি হয়েছে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের। কিন্তু শুরুতে বেশ ভালোভাবে চললেও বর্তমানে এ শিল্পে দেখা দিয়েছে অশনিসংকেত। চা চাষীদের অভিযোগ ফ্যাক্টরী মালিকেরা এবছর চা পাতার দাম কিছুটা বেশি দিলেও নানা হয়রানি পোহাতে হচ্ছে তাদের। ফ্যাক্টরীগুলোতে চাষীদের কাছে চা পাতা কেনার সময় নানা অযুহাতে কেটে নেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ শতাংশ। ফলে লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচ তুলতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের।
চা পাতার ন্যায্য মূল্যের দাবীতে বারবার সড়কে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করেও মিলছেনা কোন সুরাহা। আর এতে চরমভাবে হতাশ হয়ে চা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক বাগান মালিক। ইতোমধ্যে চা বাগান উপরে ফেলার চিন্তাও করছেন অনেকেই। আর এতে কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কায় পড়েছেন এসব বাগানে কর্মরত শ্রমিকেরা।চা চাষীরা আক্ষেপ করে বলেন, চা পাতা বিক্রি নিয়ে জটিলতার কারনে অনেক সময় কঠিন হয়ে যাচ্ছে শ্রমিকদের ঠিকমত মজুরী পরিশোধ করাও। যার ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে বাগান মালিক-শ্রমিক উভয়কেই। আবার চা বাগান কমে গেলে কমবে ফ্যাক্টরিও তাই বেকারত্বের আশঙ্কায় রয়েছেন ফ্যাক্টরীগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরাও। এ অবস্থায় পঞ্চগড়ের চা শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
চা ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষরা বলছেন, অকশন মার্কেটে চা বিক্রি কমে যাওয়ার কারনে চাষীদের অনেক সময় ঠিকমত মূল্য পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। অকশন মার্কেটে চা বিক্রি কমার পেছনের কারন জানতে চাইলে তারা দেখান নানা অযুহাত। তবে, পাতা ভেঁজা না হলে ন্যায্য মূল্যেই পাতা ক্রয় করছেন বলে জানান ফ্যাক্টরীগুলো।বাজারে টিকে থাকতে চায়ের গুনগতমান ঠিক রাখার বিকল্প নেই বলে মনে করে চাবোর্ড।
শুধু পঞ্চগড়ই নয় উত্তরের জেলাগুলোর প্রবল সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে বাঁচাতে চা চাষী, ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, চা বোর্ড সহ সবাইকে একযোগে আন্তরিকতার সাথে কাজ করা জরুরী বলে মনে করেন চাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী গতবছর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হলেও এবার তা কমে দাড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টরে। ২০২৩ সালে যেখানে তৈরিকৃত চা উৎপাদন হয়েছে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার কেজি সেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার কেজি। যা তুলনামুলক অনেক কম।