সাভারে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকারি খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র। সকলকে জানিয়ে খাল কেটে মাটি বিক্রি করছেন বলে দাবি করেছেন চক্রের সদস্যরা। তবে বিধি অনুযায়ী মাটি খেকোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সাভারে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকারি খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র। সকলকে জানিয়ে খাল কেটে মাটি বিক্রি করছেন বলে দাবি করেছেন চক্রের সদস্যরা। তবে বিধি অনুযায়ী মাটি খেকোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের বরদেশী ও চানপুর গ্রামের চানপুর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া 'তুরাগ নদীর' একটি শাখা নদী থেকে প্রায় ১ মাস ধরে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে চক্রের সদস্যরা। চক্রের মূলহোতা চার আওয়ামী নেতা। এছাড়া তাদের সাথে প্রায় অর্ধশতাধিক আওয়ামী নেতাকর্মী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের বরদেশী ও চানপুর গ্রামের তুরাগ নদীর শাখা নদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৫ টি ভেকু দিয়ে ড্রাম ট্রাক ভরে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খালের পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ২০/৩০ ফিট গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করেছেন মাটি খেকোরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা ও সমাজসেবক আব্দুর রহমান।
অভিযোগে মাটিখেকো চক্রের প্রধান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে আব্দুল হাই, নাসির ওরফে কানা নাসির, সামসু মেম্বার ওরফে ল্যাংড়া সামসু ও আমানউল্লাহকে। তবে অর্ধশতাধিক আওয়ামী নেতা ও কর্মীরা তাদের সাথে জড়িত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য ও আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সামসু মেম্বার ওরফে ল্যাংড়া সামসু। তারা সবাই আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির নেতা। সম্প্রতি তাদের কমিটি ভেঙে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তারাই পরবর্তীতে পূর্নাঙ্গ কমিটি করবেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আমিনবাজার ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে তুরাগ নদীর একটি শাখা নদী বয়ে গেছে। সেই শাখা নদীর মাটি আমিনবাজার ইউনিয়নের আওয়ামী নেতা মোঃ আব্দুল হাই , মোঃ নাসির ওরফে কানা নাসির, মোঃ শামসুল মেম্বার ওনফে ল্যাংড়া শামসু ও মোঃ আমাল উল্লাহ্ সহ অসাধু মাটি খেকো ব্যক্তিরা প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি ভেকুর দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা মৌখিক ভাবে বাধা দিলে তারা নানা ভাবে হুমকি দেয়। অভিযুক্তদের দাবি উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।
মাটি খেকো চক্রের অন্যতম সাবেক ইউপি সদস্য ও আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সামসু মেম্বার ওরফে ল্যাংড়া সামসু অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত এই মাটি বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছে। আমাদের সাথে আওয়ামী লীগের বহু লোক রয়েছে। আমিন বাজার ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানেন। এদিকে তাকায়েন না। শুরু হয়েছে কয়েকদিন ধরে। আমরা পাড় কাটিনি, ওল্টো পাড় মেরামত করেছি। একটা ইটভাটায় মাটি দিচ্ছি আমরা। শুরুই করেছি কয়েকদিন। ভেকু ইটভাটা মালিকদের, তারা মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যায়। ট্রাক প্রতি আমাদের ৭০০/৮০০ টাকা দেয়। প্রতিদিন ৮০/৯০ ট্রাক মাটি নিয়ে যায়। যেরকম আয় ওই রকম ব্যায় আছে। আপনি কাল আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আইসেন সবাইকে পাবেন। সবার সাথে যোগাযোগ ছাড়া কোন কাজ হয় না। যোগাযোগ করেই মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছি আমরা। আমরা সরকারি দল করি। সবাই মিলে আমরা করছি, বহুত মানুষ আমাদের সাথে আছে।
অভিযুক্ত আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির ওরফে কানা নাসির বলেন, আপনে একটু আগামীকাল ১২ টার মধ্যে আমিন বাজার আওয়ামী লীগের অফিসে আসেন। কাল ১২ টায় আসলে এব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলবো।
এব্যাপারে আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হাসান বলেন, অভিযুক্তরা মানুষের জমি কেটে ফেলে। এতোদিন বলছে আমরা বিআইডব্লিউটিএ থেকে, সাভার থেকে অনুমতি নিয়েছি। একথা বলে মানুষের জমি কেটে ফেলে। আমি উল্টো জমি যেন না কাটতে পারে সেজন্যে নদীর পাড়ে মাটি দিয়ে বাধ নির্মান করছি। তারা যেন মানুষের জমিতে না আসতে পারে। আমার নাম বলার তো কোন মানে নেই। আমি তো এটার বিরোধী, তারা যেন মাটি না কাটতে পারে এটা আমি চাই।
আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রকিব আহমেদ বলেন, আমার কাছে তারা একটা কাগজ নিয়ে এসেছিলেন। যাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার সুপারিশ ছিল। তবে এসব বিষয়ে বিপক্ষে বরাবরই আমার অবস্থান। ওই আওয়ামী নেতা আমারে জিজ্ঞেস করলো, কিছু করলো না উনি একটা সুপারিশ করে দিলেন। একবার জিজ্ঞেস তো করবেন। এব্যাপারে আমি মনঃক্ষুণ্ন, আমি আর যাই নি।কমপক্ষে আমার পিছনে অভিযুক্তরা ওই কাগজ নিয়ে এক মাস ঘুরেছে। এতোটুকুই আমি জানি।
এব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ্র বলেন, মাটি কাটার যে প্রসঙ্গটা রয়েছে সে বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। মাটির টপ সয়েল, যেটা মাটির ওপরে হয় যা কাটার ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট বিধি নিষেধ রয়েছে। আইন ও বিধিনিষেধের মধ্যে যে ব্যবস্থা নেওয়া যায় আমাদের এসিল্যান্ড আছে তিনি অথবা আমি নিজেই এব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো। সরকারের যে খাস জমি রয়েছে অথবা নদী নালা ও খাল রয়েছে সেগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধারে আমরা সচেষ্ট। সরকারের যে বিধিবিধান রয়েছে তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, এসব কাজ তারা আগেও করেছে। এগুলো অন্যায়। আমি তীব্র নিন্দা জানাই, একই সাথে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যত্রতত্র খালের মাটি কেটে বিক্রি করলে খালের ওপর ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পরবে। আর ভোগ করতে হবে সাধারন মানুষকে।