যৌন নিপীড়নের মতো চরম লজ্জার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে একের পর এক সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা বহিরাগতদের বিচারের দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আন্দোলন। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরাসরি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। অতীতেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আলোচনায় এসেছে এমন ঘটনা। এতে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে না, শিক্ষাঙ্গনের ইমেজও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
যৌন নিপীড়নের মতো চরম লজ্জার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে একের পর এক সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা বহিরাগতদের বিচারের দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আন্দোলন। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরাসরি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। অতীতেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আলোচনায় এসেছে এমন ঘটনা। এতে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে না, শিক্ষাঙ্গনের ইমেজও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা ও সুপারিশ করার জন্য একটি অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে।
ওই রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করা হয়। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনেকেই এই সেল বা কমিটি সম্পর্কে জানেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা নিজেরাই সচেতন নন বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির কাছে অভিযোগ করলেও যথাযথ প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া নীতিমালায় না থাকায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানির শিকার হলেও সমাধান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ফোকাল পয়েন্ট মৌলি আজাদ কালবেলাকে বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি নেই, তাদের কমিটি গঠনে প্রতিবছরই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল রয়েছে সেগুলো কার্যকর নয়। সেগুলো কার্যকর হলে এসব অভিযোগ কমে যেত। তাই এসব সেলকে কার্যকর করতে হবে।’
শিক্ষাবিদরা বলছেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলেই যৌন হয়রানির মতো ঘটনা কমতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী দৈনিক চৌকসকে বলেন, ‘আমাদের মানসিকতা ও নৈতিকতায় এখনো সমস্যা রয়ে গেছে। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তের মাধ্যমে তা প্রমাণ হলেও কম শাস্তি দেওয়া হয়। ফলে কিছুদিন পরই সে ঘটনা সবাই ভুলে যায়। এসব ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাহলে এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ হবে। তা না হলে এমন ঘটনা চলতেই থাকবে।’
ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে প্রক্টর বরাবর লিখিত দেন ওই বিভাগেরই এক ছাত্রী। পরদিন এটি উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দেন প্রক্টর। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যাপক নাদির জুনায়েদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন ওই বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী।
অভিযোগ অস্বীকার করে এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। তিনি জানান, বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার কথা রয়েছে তার। সে কারণেই জল ঘোলা হচ্ছে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে তাকে ঘায়েল করতে চায় একটি পক্ষ। সেজন্যই এ নাটক সাজানো হয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল নাদির জুনাইদকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল মনসুরকে দেওয়া চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ওই অধ্যাপকের বিষয়ে তদন্ত চেয়েছেন। সেজন্য তো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া ওই শিক্ষকও সময় চেয়েছেন। সে কারণে তাকে তিন মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এই সময় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলবে।’
যৌন নিপীড়নের মতো চরম লজ্জার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে একের পর এক সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা বহিরাগতদের বিচারের দাবিতে ঢাকা,চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আন্দোলন। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরাসরি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। অতীতেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আলোচনায় এসেছে এমন ঘটনা। এতে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে না, শিক্ষাঙ্গনের ইমেজও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা ও সুপারিশ করার জন্য একটি অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে।
ওই রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করা হয়। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনেকেই এই সেল বা কমিটি সম্পর্কে জানেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা নিজেরাই সচেতন নন বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির কাছে অভিযোগ করলেও যথাযথ প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া নীতিমালায় না থাকায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানির শিকার হলেও সমাধান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ফোকাল পয়েন্ট মৌলি আজাদ দৈনিক চৌকসকে বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি নেই, তাদের কমিটি গঠনে প্রতিবছরই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়
ধারণ করা হয়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠলে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। দুই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। ২০২৩ সালে সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী ও দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্তার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়ও উঠে আসে শাটলের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের দুটি উপ-পক্ষের নাম।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একের পর এক যৌন হয়রানি হলেও কঠোর শাস্তির নজির না থাকায়, বারবার এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সুনির্দিষ্ট ঘটনা আলোচনায় এলেই কেবল তা নিয়ে কিছু ফাইল চালাচালি হয়। কিছুদিনের মধ্যেই আবার তা থেমেও যায়।
জাবিতে রুমে আটকে রেখে ধর্ষণ:
স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আন্দোলন চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও হলসংলগ্ন এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ ছাত্রলীগের কয়েক নেতা আটক হলেও আন্দোলন থামেনি। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি, অছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করা; গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা; যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা; ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে সরব বাকৃবি:
গত শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আব্দুল জব্বারের মোড় থেকে শাহজালাল পশুপুষ্টি মাঠ গবেষণাগার সংলগ্ন রাস্তায় শ্লীলতাহানির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এক সিএনজিচালক পেছন থেকে এসে অশালীনভাবে ওই নারী শিক্ষার্থীর গায়ে হাত দেয়। শিক্ষার্থীরা ওই সিএনজিচালককে ধরার চেষ্টা করলেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ওই ঘটনার বিচারসহ চার দফা দাবিতে রোববার বিক্ষোভ করেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার দুদিনের মধ্যে অভিযুক্ত সিএনজিচালককে আটক করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা হয়। তার নাম মোশারফ হোসেন (২৩)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী জানান, ‘দ্রুতই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানিকারী সিএনজিচালককে আটক করা হয়েছে। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় পুলিশ সঠিক বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
জিরো টলারেন্সে ইউজিসি:
যৌন হয়রানি বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে ইউজিসি। জানা গেছে, ঢাবি, চবি ও বাকৃবিতে উঠা অভিযোগের বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—তা জানতে কমিশনের পক্ষ থেকে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দৈনিক চৌকসকে বলেন, ‘নিপীড়ন প্রতিরোধে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। অনেকক্ষেত্রেই তারা অযাচিত আচরণের শিকার হলেও অভিযোগ দেয় না। শিক্ষক কী ভাববে, মানুষ জেনে যাবে ভেবে চেপে যায়। তবে দু-একজন অভিযোগ করে। সব ক্ষেত্রে সচেতনতা দরকার। কোনো ধরনের ইঙ্গিত পেলে বা এমন কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত অভিযোগ জানানো উচিত