শরীয়তপুর জেলার অনেক ইউনিয়ন চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াতের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় বাজারের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
আমরা শরীয়তপুরের মানুষ হলেও আমাদের সব কাজকর্ম করতে মুন্সীগঞ্জেই যেতে হয়। আমাদের হাটবাজার করতে হয় দিঘিরপাড় বাজারে।আমাদের দৈনদিন কার্যক্রম অনেকটা এই জেলার উপর নির্ভরশীল । এই পথ দিয়েই আমাদেরকে রাজধানীতে যাতায়াত করতে হয়।
আর এই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ট্রলার। দিনের বেলা অনেক সময় ট্রলার পাওয়া গেলেও রাতের বেলা খুবই সমস্যা হয়, আর পেলেও ৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়। তাছাড়া নদীপথে সময় ও লাগে বেশি। যদি দিঘিরপাড় বাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হতো, তাহলে আমাদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না। আমরা খুব সহজে সড়কপথে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ যেতে পারতাম।বলছিলেন শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলামিন শেখ। তাঁর মতো এই পথ দিয়ে চলাচলরত হাজার হাজার মানুষের একই মত বলে জানালেন স্থানীয়রাও ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়ে পদ্মার শাখা নদীতে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখো মানুষ। উপজেলার দিঘিরপাড় বাজার ও দিঘিরপাড় চরের সঙ্গে একটি সেতু নির্মাণ হলে জেলার টঙ্গিবাড়ির বাসিন্দাদের পাশাপাশি উপকৃত হবে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। কিন্তু সেতু না থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পদ্মার শাখা নদী পারাপারে এখন ট্রলারই একমাত্র ভরসা। ট্রলারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা করিম বেপারীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দিঘিরপাড় বাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর ওপারে রয়েছে দিঘিরপাড়ের চরএলাকা। নদী পারাপারে একমাত্র বাহন ট্রলার। একই শাখা নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সহজ যোগাযোগের কারণে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ পথে যাতায়াত করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
তারা মূল পদ্মা পাড়ি দিয়ে দিঘিরপাড় চরে আসেন। এর পর চর থেকে ট্রলারে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দিঘিরপাড় বাজারে যান। সেখান থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে তাদের সময় কম লাগে। মূল পদ্মা নদী ট্রলারে পাড়ি দিলেও দিঘিরপাড় বাজারের পদ্মার শাখা নদী পাড়ি দিতে ট্রলারের জন্য তাদেরকে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়।মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে খরচ পড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েক গুণ। অথচ এখানে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।
দিঘিরপার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের সদ্যনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, একটি সেতুর অভাবে মানুষের কত দুর্ভোগ, সেটি আমি নিজের চোখে প্রতিনিয়ত দেখছি। সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানিয়েছি। যতদূর জানতে পেরেছি এখানে খুব শিগগিরই একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে।
এ নদীর উপর দিয়ে ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে চার কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান টঙ্গিবাড়ী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো.শাহ মোয়াজ্জেম।এই কর্মকর্তা বলেন, সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে মাটি পরীক্ষা ও অন্যান্য সার্ভে কাজ সম্পন্ন করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল। এখন নকশা করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। বরাদ্দ হলে দরপত্র আহব্বান করা হবে। বরাদ্দ পেলে আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে।