শিক্ষার্থী-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসন। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে এখন অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন। দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা কয়েক বছর ধরেই পতনের দিকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলের প্রত্যাশা অর্থনীতির ক্ষত কাটিয়ে দ্রুত সব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। শিক্ষার্থী-জনতা আন্দোলন নস্যাত করতে সাধারণ ছুটি ও কারফিউর কারণে দেশের অর্থনীতিতে বড়ো ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বড়ো ও মাঝারি কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন, ব্যাংকের সুদসহ প্রতিদিন কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে এবং দেশের কোনো মানুষ যাতে আর্থিকভাবে কষ্ট না পান, সেজন্য সবাইকে সহনশীল হতে হবে। বিজিএমইএর তথ্যমতে, আন্দোলন শুরুর দিকে ৪-৫ দিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছুদিন যাবত ঢাকা আশুলিয়ার ইপিজেড নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে দেশের অর্থনীতি এবং শিল্পখাতের উপরে বড় একটা প্রভাব পড়েছে। দেশের বড়ো ও মাঝারি শিল্পের উদ্যাক্তাদের মতে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন বিশেষভাবে ব্যাহত হয়েছে, সেহেতু এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন সূচকে অস্থিরতা দৃশ্যমান। প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সংকটে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য খাদ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের একটি অন্যতম কারণ হলো ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ। এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা সংকট লক্ষ করা গেছে। নতুন অর্থবছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিয়োগ ও রাজস্ব আয়-এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরেও এসব খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অবশ্য বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতেও চলছে নানা অনিশ্চয়তা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও পরবর্তিতে নির্বাচিত সরকারকে নতুন করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দরকার দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক সুশাসন, দরকার দেশের জনগণের কাছে, বিশ্বের কাছে নিজেদের স্বচ্ছতা। তাহলেই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আর বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হলে বহির্বিশ্বের বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানা পরিচালনায় যেসব সংকট সৃষ্টি হয় সেসব সংকট দূর করতে যথাযথ কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।